সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে বিজেপি সরকারের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, এর জেরে কমবে সন্ত্রাসবাদ। তবে হিসেব বলছে, সন্ত্রাসবাদে লাগাম টানা দূরের কথা এই নীতি বুমেরাং হয়েছে কাশ্মীরে। সন্ত্রাস জারি রয়েছে। এবার কি উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদ ঢুকে পড়ল সংসদীয় গণতন্ত্রে! কাশ্মীরের বারামুলা কেন্দ্রে ওমর আবদুল্লাকে হারিয়ে এবার জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী তিহাড় জেলে বন্দী আবদুল রশিদ শেখ।
জম্মু ও কাশ্মীরের ভোটের ফলাফল বলছে, জম্মু ও উধমপুর এই দুই কেন্দ্রে এবার বড় জয় পেয়েছে বিজেপি। উধমপুরে জয়ী হয়েছেন ডাক্তার জিতেন্দ্র সিং। এবং জম্মুতে জয়ী হয়েছেন যুগল কিশোর। ১ লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে কংগ্রেসের প্রার্থীদের হারিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে, কাশ্মীরের তিন কেন্দ্র অনন্তনাগ-রাজৌরি, বারামুল্লা এবং শ্রীনগর। এর মধ্যে শ্রীনগরে জয়ী হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের প্রার্থী সইদ রুহুল্লা মেহেদি। অনন্তনাগ-রাজৌরিতে মেহবুবা মুফতিকে হারিয়ে জয়ী ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী আলতাফ আহমেদ। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে বারামুলায় ২ লক্ষের বেশি ভোটে ওমর আবদুল্লাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন আবদুল রশিদ শেখ। এককালে বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতা তথা জেকেপিসি-র প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি লোনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এই ব্যক্তি। সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানের অভিযোগে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের বর্তমানে জেলবন্দি এই নেতা। তাঁর নির্বাচন জয়কে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না রাজনৈতিক মহল।
[আরও পড়ুন: মেলেনি কুলার, বার বার নেওয়া হচ্ছে ওজন! তিহাড়ে কেজরির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আপের]
কাশ্মীরের মাটিতে এমন ব্যতিক্রমী ঘটনার পিছনে মূলত বিজেপির নীতিকেই দায়ী করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের দাবি, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের মাটিতে ডিলিমিটেশন বা আসন পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্য নিয়েছিল বিজেপি। এর পিছনে সুপ্ত উদ্দেশ্য ছিল, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলিকে নিয়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে উপত্যকার রাজনৈতিক পট বদলে দেওয়া। যাতে কাশ্মীরের মাটিতেও হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে সরকার গঠন সম্ভব হয় বিজেপির। শুরু থেকেই বিজেপির এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি। দাবি জানানো হয়েছিল, ৩৭০ ধারা পুনরায় লাগু হোক জম্মু ও কাশ্মীরে। তবে যে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতাকে মূল হাতিয়ার করেছিল বিজেপি হিসেব বলছে তা আদৌ সফল হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসবাদ ভালোই বেড়েছে উপত্যকায়। এরই মাঝে বারামুল্লা থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নির্দল প্রার্থী রশিদের জয় যথেষ্ট চাপে রাখবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
[আরও পড়ুন: ফের একবার মোদি সরকার! ৫০০ বছর আগে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কালদ্রষ্টা নস্ট্রাদামুস?]
জানা যাচ্ছে, এককালে পেশায় ইঞ্জিনিয়র ছিলেন আবদুল রশিদ শেখ। পরে উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদের সঙ্গে পুরো মাত্রায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকী সন্ত্রাসবাদকে অর্থ জোগানের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলবন্দী এই নেতা। জেল থেকেই এবার নির্বাচনে লড়েন রশিদ। পুরো লোকসভা নির্বাচনে এবার তাঁর হয়ে প্রচার করেছিলেন রশিদের দুই পুত্র। অবশ্য কাশ্মীরের রাজনীতিতে রশিদের আগমন এই প্রথমবার নয়, এর আগে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন রশিদ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি। এবার নির্দল হিসেবে বারামুল্লা থেকে জয়ী হয়ে কাশ্মীরের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ফেলে দিলেন একদা দাগি হুরিয়ত নেতার সঙ্গী।