শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: আগে রাম পরে বাম! এই চোরাস্রোতে আটকে গিয়েছিল বাম। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই চোরাস্রোত আটকাতে পারেনি বামেরা। ফলে একেবারে তলানিতে ঠেকে গিয়েছে একদা রাজ্যের শাসকদল। এবার সেই চোরাস্রোতকে আটকাতে মরিয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাম নেতারা। পাশাপাশি রামে চলে যাওয়া ভোট ফিরিয়ে আনতে এবার তাঁদের কৌশল বদল করছে জেলা বামফ্রন্ট। বামেদের চিরাচরিত ট্রাডিশনাল প্রচার পদ্ধতির পাশাপাশি ‘নতুন’ কৌশল নিতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।
বামেদের (CPM) হিসেব বলছে, মোট ভোটারের ৪৫ শতাংশের বেশি ভোটারের বয়স ৪০-এর নিচে। এই ভোটারদের ‘ক্যাপচার’ করতে বিশেষ পদ্ধতি নিতে চলেছে জেলা সিপিএম। তাই সোশাল মিডিয়ায় জোর দিয়েছে বামেরা। বামফ্রন্টগতভাবে আলোচনার বাইরে গিয়ে সিপিএম তার নিজস্ব পদ্ধতি নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে । হিসেব বলছে, একদা বামঘাঁটি পশ্চিম মেদিনীপুরের দুটি আসনই তাঁদের হাতছাড়া। শুধু হাতছাড়া নয়, ভোটের শতাংশের হার কমতে কমতে একেবারে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতাংশের ঘরে ঢুকেছে। তাঁদের আরও হিসেব, বামেদের সিংহভাগ ভোটই গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে। এই গেরুয়া শিবির থেকে ভোট টানতেই এবার কৌশল বদল করেছে সিপিএম। বামেদের দাবি, ২০১৪ সালের লোকসভা ও ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে তাঁরা দ্বিতীয়স্থানে ছিল। ২০১৯-এর লোকসভার পর দ্রুত কমতে থাকে বামেদের ভোট।
[আরও পড়ুন: সৌদির জেলে ১৮ বছর বন্দি, মৃত্যুদণ্ড এড়াতে প্রয়োজন ৩৪ কোটি! জোগাড় করল কেরলবাসী]
জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে ঘাটাল বিধানসভায় যেখানে সিপিএম ভোট পেয়েছিল ৮৪ হাজার ৮৬৪টি। সেই ভোট ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দাঁড়ায় মাত্র আট হাজার ১৫৬টি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএম পায় মাত্র ১০ হাজার ১৬৫টি ভোট। অর্থাৎ লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বামেদের স্থান হয় তৃতীয়। এইভাবে বিধানসভা ধরে ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বামেদের দাবি, এবার গেরুয়া শিবিরে যাওয়া শুধু ঠেকানো নয়, গেরুয়া শিবির থেকে বামেদের ভোট টেনে আনতেই হবে। তাই প্রার্থী ঘোষণা না হলেও বুথ নির্বাচনী কমিটি গঠন অনেক আগেই সেরে ফেলেছে বামেরা। বামেদের দাবি, প্রার্থী ঘোষণার আগেই প্রায় ৭০ শতাংশ বুথ কমিটি গঠন সারা হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে কর্মীদের মনোবল ফেরানোর দিকে। বামেদের দাবি, পরপর ভোটে পরাজিত শুধু নয়, ভোটের হারও তলানিতে ঠেকে গিয়ে কর্মীদের মনোবলও একেবারে তলানিতে ঠেকে গিয়েছে। কর্মীদের মনোবল ফেরানোই তাঁদের প্রধান কাজ।
দাসপুরের সিপিএম নেতা, জেলা কমিটির সদস্য গণেশ সামন্ত বলেন, ‘‘পরপর ভোটে খারাপ ফলের জেরে কর্মীদের মনোবল বলে কিছু নেই। সেটা আগে আমরা ফেরাতে চাই। তার জন্য রাজ্য নেতৃত্বদের এনে কর্মী বৈঠকে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম মণ্ডল বলেন, ‘‘বিজেপিতে চলে যাওযা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সি ভোটারদের প্রতি। তাঁদের যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল তা ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর জন্য আমরা ৪০ বছর বয়সের নিচের ভোটারদের কাছে পৌঁছতে এক বিশেষ পদ্ধতি নিয়েছি। কেন না এই বয়সের যুব ভোটাররা গভীর হতাশায় ভুগছেন। আমরা বোঝাতে চাইছি, তাঁদের হতাশা বিজেপি বা তৃণমূল নয়, হতাশা কাটাতে পারবে বামেরাই।’’