কৃষ্ণকুমার দাস: নিরুদ্দেশ ২০ লন্ডন ফেরত বিমানযাত্রীই এখন কলকাতা পুরসভার (KMC) প্রবল মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ, গত চারদিন ধরে কার্যত খড়ের গাঁদায় সূচ খোঁজার মত করে তল্লাশি চালিয়েও বিলেত ফেরত ওই নিরুদ্দেশ যাত্রীদের একজনেরও টিকি খুঁজে পাননি পুরকর্তারা। স্বভাবতই আগের ভাইরাসের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন করোনার নয়া স্ট্রেন যদি ওই নিরুদ্দিষ্টদের শরীরে থাকে এবং জনবসতিতে মিশে থাকেন তবে শহরের জন্য নয়া করোনা ‘খুবই ভয়ংকর’ হয়ে উঠতে পারে।
শনিবার পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিরুদ্দিষ্টদের কথা জানিয়ে বলেন, “লন্ডন ফেরত ৫৭ জন বিমানযাত্রীর তালিকা রাজ্য সরকার পুরসভাকে দিয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র একজন করোনার নয়া স্ট্রেনে পজিটিভ। তিনি মেডিক্যালে ভরতি। তবে ২০ জন যাত্রীর কোনও সন্ধান মিলছে না।”
[আরও পড়ুন : সেনা গোয়েন্দাদের খবরের ভিত্তিতে এন্টালির নির্মীয়মান বাড়ি থেকে উদ্ধার ২২টি তাজা বোমা]
রাজ্য সরকার টিকার ডোজ পাঠিয়ে নির্দেশ দিলে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডেই এক সাথে ভ্যাকসিন চালু করতে প্রস্তুত রয়েছে পুরসভা। বিষয়টি নিয়ে পুরসভার সমস্ত ওয়ার্ডে টিকা প্রাপক এবং পরিচালনা করতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা হাতে নিয়ে বৈঠকও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। পরিকাঠামোগত যাবতীয় প্রস্তুতি ব্যাখ্যা করে মুখ্যপ্রশাসক বলেন, “যেহেতু পুরসভা প্রতি মাসে, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের নানা ধরনের টিকার ‘ইমিউনাইজেশন’ কর্মসূচি পরিচালনা করে তাই কোভিড ভ্যাকসিন দিতে কোথাও কোনও সমস্যা হবে না।” এমনকী নির্দিষ্ট কম তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে যে ‘ক্লোড-চেন’ তৈরি হয়েছে তার সঙ্গেও কথা বলে নেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ জানান।
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, ‘‘উধাও যাত্রীদের মধ্যে একজনও যদি পজিটিভ হন এবং তিনি যদি লোকালয়ে ঘুরে বেড়ান, সামাজিক কর্মসূচিতে মেলামেশা করেন তবে সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।” নিরুদ্দিষ্ট ২০ বিমানযাত্রীদের শরীরে যদি নয়া স্ট্রেন থাকে তবে তা দ্রুত গোষ্ঠী সংক্রমণে সাহায্য করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। বিমানবন্দরে থেকে লন্ডন থেকে আসা যাত্রীদের যে নাম ও ঠিকানা পুরসভায় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছে তা পুরোপুরি ভুয়ো। অনেক ঠিকানায় তো আবার কোনও আবাসিকই থাকেন না।
[আরও পড়ুন : দু’মাস পরেই প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা, এখনও স্কুল না খোলায় উদ্বেগে উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়ারা]
নিউ আলিপুরের এমন ঠিকানায় কারখানা রয়েছে। যদিও ওই কারখানার মালিক বা কর্মচারি কারোর সঙ্গে ওই নির্দিষ্ট বিমানযাত্রীর নাম, পদবি বা অন্য কোনও সম্পর্ক নেই। আবার নিরুদ্দিষ্ট এক যাত্রী উত্তর কলকাতায় বহুতল আবাসনের যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখানে আদৌ বহুতল তো দূরের কথা কোনও আবাসন নেই। সংক্রমণ রুখতে সতর্ক পুরসভা অবশিষ্ট যে ৩৭ জনের সন্ধান পেয়েছে তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লালারস সংগ্রহ করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করেছে। একইসঙ্গে যাত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে তা নিয়ে প্রতিদিনই নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ৩৭ লন্ডন ফেরত বিমানযাত্রীরই যাবতীয় মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট ও আরটিপিসিআর পরীক্ষার তথ্যও স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হচ্ছে।