সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লখনউ মানেই আভিজাত্যে মোড়া ইতিহাস। স্থাপত্যের খিলানে লেখা নবাবি কীর্তিগাথা। আর বাঙালির কাছে লখনউ মানেই বাদশাহী আংটির রহস্যভেদ। তবে বইয়ে পড়া বা শোনা এ লখনউয়ের পাশেই আছে আর এক নগরী। তা ঝাঁ-চকচকে, স্মার্ট, আধুনিকতার পরদা মোড়া। একই অঙ্গে এত রূপই লখনউ নগরীর বিশেষত্ব। আর তাই বহিরঙ্গে ঝকঝকে লখনউ নগরীর ভিতর সেই আভিজাত্যের জড়োয়ায় মোড়া পুরনো নগরীকে চিনতে গেলে হেঁটে দেখা শিখতে হবে।
লখনউ মানেই নবাবি স্থাপত্যের হরেক নিদর্শন। আর তাই গিয়ে পৌঁছতেই হবে বড়ে ইমামবাড়ার সামনে। অঔধের নবাব আসাফউদ্দৌলার আমলে তৈরি হয়েছিল এই স্থাপত্য। প্রশ্ন জাগে, এই বিপুল স্থাপত্য তৈরির আসল কারণটি কী? জানা যায়, সপ্তদশ শতকে সেই সময় খরাগ্রস্ত হয়েছিল এই লখনউ নগরী। নবাব চেয়েছিলেন, কোনও একটি কাজের মাধ্যমে প্রজারা যাতে নিজেদের রুটি রুজি অর্জন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি নগরীকে বহিরাগত সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করাও ছিল উদ্দেশ্য। আর এ দুই লক্ষ্য পূরণ করেই গড়ে উঠেছিল বড়ে ইমামবাড়া।
বড়ে ইমামবাড়ার ঠিক উপরেই আছে বিখ্যাত ভুলভুলাইয়া। কথিত আছে, নবাব নাকি বেগমদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার জন্য এটি তৈরি করেছিলেন। তবে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, এ স্থাপত্যেরও আসল উদ্দেশ্য সেনার আক্রমণ প্রতিহত করা। ত্রি-মাত্রিক জ্যামিতিক স্থাপত্যের এমন নিদর্শন দ্বিতীয়টি মেলা ভার। সতেরো শতকে ভারতে জ্যামিতি তথা অঙ্কশাস্ত্র কতটা উন্নত ছিল তা এই স্থাপত্য থেকে সহজেই অনুমেয়।
ঠিক পাশেই দেখা মিলবে বাওলির। বড়ে ইমামাবারা থেকে ছোট ইমামবারা হয়ে চলে যাওয়া যায় রেসিডেন্সির দিকে। ইংরেজ শাসকদের এই বসতি ইতিহাসের খনিপ্রায়।
এবার চোখ ফেরানো যাক আধুনিক লখনউ নগরীর দিকে। যেখানে বেশ কটি পার্ক ভ্রমণপিপাসুদের মনে ধরবে। বাবাসাহেব আম্বেদকর পার্ক, কারগিল পার্কের পাশাপাশি লক্ষ্যণীয় এই নতুন লখনউয়ের রাস্তাঘাট। প্রায় ধুলোহীন এ নগরী। আরও বিশেষত্ব এই যে এ শহরে কোনও সিগন্যাল নেই। আর কী আশ্চর্য তেমন কোনও দুর্ঘটনাও নেই। বিশাল জ্যাম-জটে অন্যান্য শহরে যখন নাভিশ্বাস ওঠে তখন এই মডেল নিশ্চিতই চমকপ্রদ। মেট্রোর কাজকর্ম চলছে, শিগগিরই মেট্রোসিটির তকমা পেতে চলেছে লখনউ।
লখনউ মানেই নগরীর অলি গলি ম’ ম’ কাবাবের গন্ধে। গলৌটি কাবাব থেকে তুন্ডে কাবাবের দোকানে ঢুঁ মারতে কেউ ভুল করেও মিস করবেন না। তুন্ডে অবশ্য গোমাংসের কাবাব। দস্তর খানের অতিথি হতে যেমন কেউ ভুলবেন না, তেমনই ছাড়বেন না রাম আশ্রের মিষ্টির স্বাদ।
কীভাবে যাবেন-
হাওড়া স্টেশন থেকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস বা কলকাতা আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট এক্সপ্রেস, অমৃতসর বা দুন এক্সপ্রেস চেপে বসে পড়লেই হল। শহরে পৌঁছে বহু হোটেল আছে। তবে পুরনো লখনউ অবশ্যই ঘুরে দেখবেন টাঙ্গায়। হাতে সময় থাকলে ওখান থেকেই চলে যেতে পারেন অযোধ্যা, বেনারস বা প্রয়াগের দিকেও।
The post জব মন চলে লখনউ নগরী… appeared first on Sangbad Pratidin.