সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় সংস্কৃতিতে মহাত্মা গান্ধী শুধু মননে নয়, পকেটেও। লোভের সঞ্চয় বলুন বা দুর্দশা কাটানোর অবলম্বন, 'গান্ধী' ছাড়া গতি নেই ভারতীয়ের। এহেন গান্ধীর মতাদর্শ নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে একটা শ্রেণির মধ্যে, তবে কড়কড়ে নোটে হাসিমুখের 'বাপু'তে অরুচির প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু জানেন কী, গান্ধীর ছবি বিশিষ্ট যে নোটে আপনার চোখ অভ্যস্ত, সেখানে পছন্দ তালিকায় একেবারেই ছিলেন না বাপু। প্রথম নোটে বাদ দেওয়া হয়েছিল গান্ধীকে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের মধ্যরাতে ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজাল ভেঙে মুক্ত হয় ভারত। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণতন্ত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। এর পর প্রয়োজন পড়ে ভারতের নিজস্ব নোট ব্যবস্থার। সাধারণ মানুষ ভেবেছিল জাতির জনক হওয়ার সুবাদে মহাত্মা গান্ধীই জায়গা নেবেন ভারতীয় নোটে। বাস্তব পরিস্থিতি সে পথে হাঁটেনি। ১৯৪৯ সালে প্রথম এক টাকার নোট ছাপে ভারত সরকার। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মতিতে ঠিক হয় সারনাথের সিংহ প্রতীক ছাপা হবে ১ টাকার নোটে। এর পর থেকে অনেক বছর পর্যন্ত ব্যাঙ্ক নোটগুলিতে ছাপা হয় স্বাধীন ভারতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রগতির ধারার প্রতীক। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় নোটে বিভিন্ন সময়ে ছাপা হয়েছে বাঘ, হরিণের ছবি। কিংবা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শিল্পের অগ্রগতির প্রতীক। যেমন হিরাকুদ বাঁধ অথবা আর্যভট্ট উপগ্রহ এবং বৃহদেশ্বর মন্দির।
এর পর সময় আসে ১৯৬৯ সাল। মহাত্মা গান্ধীর ১০০-তম জন্ম জয়ন্তী। বিশেষ এই বছরে 'বাপু'কে ছাড়া অন্য কিছু ভাবা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ওই বিশেষ বছরে ছাপা নোটে ছিল মহাত্মা গান্ধীর বিশেষ ভঙ্গিতে বসা ছবি। পিছনে ছিল সেবাগ্রাম আশ্রম। তবে তখনও বহু নোট ছাপা হত গান্ধী ছাড়াই। এর পর রাজীব গান্ধীর সরকারের আমলে ১৯৮৭ সালে নতুন করে ৫০০ টাকার নোট চালু করে সরকার। যেখানে প্রথমবার ছাপা হয় গান্ধীর হাসি মুখের ছবি। উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৭৮ সাল থেকে চলছিল জনতা পার্টির সরকার। সেই সময় নোটবন্দি চালানো হয়। বন্ধ করা হয় ৫০০ টাকার নোট ছাপানো। রাজীব গান্ধী ক্ষমতার এসে তা পুনরায় চালু করেন। সেই শুরু, এর পর ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর ছবি দেওয়া নোটের সিরিজ শুরু করে আরবিআই। তখন থেকেই টাকায় চিরতরে জায়গা করেন নেন বাপু।
তবে ভারতীয় নোটে দীর্ঘ বছর ধরে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিলেও বিতর্ক এড়ানো যায়নি। অতীত থেকে এখনও পর্যন্ত নানা সময়ে টাকা থেকে গান্ধীকে সরানোর প্রস্তাব এসেছে। জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এমনকী লক্ষ্মী-গণেশের ছবি দিয়েও নোট ছাপার দাবি জানানো হয়েছে। এর পর ২০১৬ সালে টাকা থেকে গান্ধীকে সরানোর প্রসঙ্গ উঠলে অর্থপ্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাকা থেকে গান্ধীকে সরানোর কোনও প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আম্বেদকরের ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে সরকার তাঁর সম্মানে ১২৫ টাকার বিশেষ কয়েন ও ১০ টাকার কয়েন চালু করে ঠিকই তবে তার ছবি দেওয়া কোনও নোট প্রকাশ করা হয়নি।