shono
Advertisement

অকাল দোল মালদহে! স্কুলের জরাজীর্ণ দেওয়ালে খুদেদের পেনসিল-রং-তুলিতে বসন্তের ছোঁয়া

ছোট ছোট পড়ুয়াদের শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ সকলে।
Posted: 04:30 PM Feb 24, 2023Updated: 04:30 PM Feb 24, 2023

বাবুল হক, মালদহ: অকাল দোল, অকাল রং। এ এক স্কুলের খুদেদের রোজকার আয়োজন। দোলের আগেই দেওয়ালে দোল। পড়ার ফাঁকে রঙের উৎসবে মেতে উঠছে খুদে পড়ুয়ারা। তবে রং খেলা নয়, রং-তুলি হাতে সখ্য যেন বিদ্যালয়ের দেওয়ালের সঙ্গেই। জরাজীর্ণ দেওয়াল ঘষে আলপনা এঁকে সমাজকে বার্তা দেওয়া, সবই করছে ওরা। মালদহ (Maldah) শহরের মহানন্দা নদীর পাড়ে সদরঘাট বাঁধরোডের ধারে চিন্তামণি চমৎকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হতেই হবে।

Advertisement

খুদে পড়ুয়া আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে অকাল রঙের (Colourful) উৎসবে সেজে উঠেছে বিদ্যালয়ের পুরনো, জরাজীর্ণ দেওয়ালগুলি। আনন্দদায়ক পাঠদানের উদ্দেশে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে এভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলায় আপ্লুত জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের কর্তারাও। ঘুরে দেখে প্রশংসা করছেন সক্কলে।

[আরও পড়ুন: বাজার থেকে উধাও পিঁয়াজ? বিশ্বজুড়ে তীব্র হচ্ছে সংকট]

দোল এখনও কিছুটা দেরি আছে। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই খুদেদের। মালদহ শহরের সদরঘাট এলাকায় ১৯৩২ সালে স্থাপিত চিন্তামণি চমৎকার বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদেরা ব্যস্ত দেওয়াল সাজাতে। সঙ্গী অবশ্যই তাঁদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের প্রাচীন এই বিদ্যালয়কে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার ভাবনাটা শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগেই। শুরু হয় পরিকল্পনা, তৈরি হয় রং-তুলি (Paint-Brush) কেনার বাজেট। কিন্তু কোনও পেশাদার শিল্পীকে দিয়ে যদি এই কাজ করানো হয়, তাহলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে এই ধরনের ব্যয় বহন করা কার্যত অসম্ভব।

[আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস মাধ্যমিকের ইংরাজি প্রশ্ন! বিস্ফোরক দাবি সুকান্তর, পালটা কুণালের]

এখান থেকেই পরিকল্পনা বদল। এগিয়ে আসে স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা। তাদের আবদার, “স্যর শুরু করুন, আমরাও হাত লাগাব। রং-তুলি ধরব।” ওদের এই আবেগ জড়ানো আবদারকে উপেক্ষা করেনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শহরের কিছু সহৃদয় শিল্পীও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শিল্পীরা রুল-পেন্সিল দিয়ে শুধু কাঠামোটা এঁকে দেন দেওয়ালে। আর তুলির রঙে তা ফুটিয়ে তুলছে শিশুরা। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে বিদ্যালয়ের প্রাচীন জরাজীর্ণ দেওয়ালগুলি। রং ওঠা, প্লাস্টার খসা দেওয়ালগুলির জায়গা নিয়েছে রং-বেরঙের বাহারি ছবি। কোনও দেওয়ালে ‘গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও’, কোনওটায় লেখা ‘প্রচণ্ড গরমে পশুপাখিদের জলদান’ সেই সঙ্গে ‘জলের অপচয় রোধ’-এর ছবি, কোথাও লেখা হয়েছে ‘বন্ধুদের সঙ্গে বিবাদ নয়, চাই সহমর্মিতা’।

প্রধান শিক্ষক সন্দীপন দেবনাথ বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়টা খুবই বড়। এখানে অনেক পুরনো দেওয়াল ছিল। দেখতে খারাপ লাগত। আমরা শিশুদের নিয়ে পরিকল্পনা করি। এই সমস্ত দেওয়ালগুলি বিভিন্ন ছবি, স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে সাজিয়ে তুলব। জেলার কিছু শিল্পীদের সাহায্য নিয়ে আমরা এই কাজ করেছি। এবং করছি। শিশুরা খুশি। তারাও এই কাজে হাত লাগাতে পেরেছে। এখন শিশুদের কাছে স্কুলটা একটা আনন্দের জায়গা হয়েছে। দেওয়াল থেকে তারা অনেক কিছু শিখতে পারছে। অনেকেই দেখে যাচ্ছেন, শিশুদের প্রশংসা করছেন। খুব ভালো লাগছে। পুরনো স্কুলকে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলে খুশি শিশুরাও।”

বিদ্যালয়ের এই অভিনব ঘটনায় খুশি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি বাসন্তী বর্মনও। তিনি বলেন, “শিশুস্বার্থে অভিনব উদ্যোগ। আগামীতে এই ধরনের উদ্যোগ জেলা জুড়ে যাতে ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সমস্ত দেওয়াল থেকে শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারছে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement