সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোট দেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই একজন নাগরিককেও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা বাঞ্ছনীয় নয়। প্রত্যেক নাগরিক যাতে সহজে এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করাও নির্বাচন কমিশনের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আর এই অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়েই প্রচুর ঝক্কি পোহাতে হল অরুণাচলের জনা পাঁচেক সরকারি কর্মী এবং দু’জন নিরাপত্তাকর্মীকে।
[আরও পড়ুন: বোরখা পরা স্বামীর ছবি পোস্ট, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের গালে চড় পাকিস্তানি তরুণীর]
অরুণাচল প্রদেশের মালোগাম গ্রাম। এক্কেবারে তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত এই গ্রামটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে তেমন কিছু নেই। পাহাড়ের বুক বেয়ে ট্রেকিং করেই যেতে হয় এখানে। আশ্চর্যজনকভাবে এই গ্রামে সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে একশো শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? ভাবছেন, সকাল সাতটায় ভোট শুরু হয়ে সাড়ে ৯টার মধ্যে ভোট কীভাবে শেষ হয়? ছাপ্পার সংশয় উঁকি দিচ্ছে মনে? না, এমনটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র এই কেন্দ্রটিতে একজন মাত্র ভোটার ছিলেন বলে। সকাল সাড়ে ৯ টার সময় এসে তিনি নিজের ভোটটি দিয়ে গিয়েছেন।
৩৯ বছর বয়সী সোকেলা ট্যায়াং। তিনিই মালোগামের একমাত্র নথিভুক্ত ভোটার। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, মালোগামে একটি মাত্র পরিবার বাস করেন। এবং সেই পরিবারে পাঁচ সদস্য। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সময় মালোগামে নথিভুক্ত ভোটার ছিলেন দু’জন। সোকেলা ট্যায়াং ও তাঁর স্বামী। কিন্তু, এবারে সোকেলার স্বামী ভোটটি তিনি অন্য কোথাও ট্রান্সফার করিয়ে নিয়েছেন। একমাত্র ভোটার হিসেবে সোকেলার ভোটদান নিশ্চিত করার জন্য পাঁচজন ভোটকর্মী এবং একজন নিরাপত্তাকর্মী এবং কয়েকজন গাইডকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কিন্তু সমস্যাও অনেক। আনজাও জেলার যে এলাকায় মালোগাম জায়গাটি অবস্থিত সেখানে কোনও যানবাহন চলাচল করে না। প্রায় ৫ কিলোমিটার বন্ধুর পথ পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, গ্রামে কোনও স্কুল, বা হাসপাতালের মতো সরকারি জায়গা ছিল না। তাই অস্থায়ী একটি ভোটকেন্দ্রও তৈরি করতে হতো। সেকারণে পাঠানো হয়েছিল কয়েকজন শ্রমিককে। সাধারণত নির্বাচন কমিশন এলোমেলোভাবে ভোটকর্মীদের কেন্দ্র ভাগ করে দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে পাহাড়ি রাস্তায় ওঠানামা করতে দক্ষ এমন পাঁচজনের একটি দলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ২টি ইভিএম নিয়ে সেই ভোটকেন্দ্রে যান ভোট নিতে।
[আরও পড়ুন: চায়ের দোকানেও চৈত্র সেল! রয়েছে স্ট্যান্ড ফ্যান জেতার সুযোগও]
প্রথমে বাসে করে, তারপর ৬ কিলোমিটার সেই বন্ধুর রাস্তা পেরিয়ে মালোগাম এলাকায় গিয়েও বিপত্তি। সেখানে আবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না একমাত্র ভোটারকে। অনেক কষ্টে কোনওক্রমে খুঁজে পাওয়া যায় সোকেলা ট্যায়াংকে। একটি অস্থায়ী টিনের পোলিং বুথ তৈরি করা হয়। সেখানে এসেই সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ একই সঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভার ভোট দেন তিনি। ট্যায়াংয়ের ভোট সকাল সকাল হয়ে গেলেও, শুধুমাত্র খারাপ নেটওয়ার্কের জন্য জেলা প্রশাসনকে জানাতে জানাতে সন্ধে হয়ে যায়। সন্ধেবেলায় সেখান থেকে ফেরেন বুথকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, একটু ঝক্কি হল তো কী হয়েছে? শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রেরই জয় হল তো। কেউ কেউ অবশ্য কটাক্ষ করে বলছেন, ভাগ্যিস ইভিএম খারাপ হয়নি!