তরুণকান্তি দাস: রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পক্ষেত্রগুলিকে অক্সিজেন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল আগেই৷ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই দশটি বিশেষ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে আগামী পাঁচ বছরের রোড ম্যাপ তৈরি করে কাজে নামতে চলেছে সরকার৷ খসড়া প্রস্তুত৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দেখছেন বিষয়টি৷ সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাস দেড়েকের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে৷ এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে কান্ডারি৷ যা মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই দফতর সূত্রে খবর৷ এই বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম-জোকা)৷
দফতর সূত্রে খবর, সমীক্ষা করেই বিশেষ ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ একসময় এই সমস্ত শিল্পের উৎকর্ষতায় শিখরে ছিল বাংলা৷ নতুন কিছু ক্ষেত্রের পাশাপাশি এই বিষয়গুলিকেও রাখা হয়েছে তালিকায়৷ ক্ষমতায় এসেই যেমন মসলিন, আতর, তাঁত-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রের পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, বিশ্ববাংলার স্টলে বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তেমনই ভাবনা মাথায় রেখে হাঁটছে সরকার৷ স্পেশাল লিডারশিপ প্রোগ্রামের(এসএলপি) মধ্যে দশটি ক্ষেত্রকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ নাম দেওয়া হয়েছে কান্ডারি-এসএলপি৷
ভোটের সময় যখন নির্বাচনী বিধি লাগু ছিল, তখন বসে না থেকে সমীক্ষার কাজটি সেরে ফেলা হয়েছেল৷ কোন জেলায় কোন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কী হাল, তার অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্তমানকে কী করে আলোকিত ভবিষ্যতে তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব তা ঘিরে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়৷ তারপর এসএলপি-র আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়৷ চর্ম, জরি, সিল্ক, অলঙ্কারের নকশা, ফুড প্যাকেজিং ও প্যাকেজড ফুড, বাঁশজাত পণ্য, ফর্জিং-সহ দশটি ক্ষেত্রকে অক্সিজেন জোগাতে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার? খসড়া প্রস্তাব বলছে, জেলাভিত্তিক ধুঁকতে থাকা, লুপ্তপ্রায় অথচ সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলিকে চিহিত করে সেখানে যে শিল্প বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে তার ক্লাস্টার করা হবে৷ যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বানতলায় লেদার কমপ্লেক্স রয়েছে, তার আশপাশেই চর্মজ শিল্পকে আরও উন্নত করতে উদ্যোগী হবে রাজ্য৷ তবে এই পরিকল্পনা রূপায়ণে সবক্ষেত্রে জমি প্রয়োজন, এমনটা নয়৷ বরং প্রয়োজন অর্থ বরাদ্দ ও বিশেষ পরিকল্পনা৷ যাতে পরিকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদনের গুণমান বৃদ্ধি, তার বাজার ধরার কাজ সহজ হয়৷ কেন না সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, বিপণনের দুর্বলতায় এইসব ক্ষেত্রের শিল্পীরা পয়সা পাচ্ছেন না৷ টেক্কা দিতে পারছেন না বাজারের প্রতিযোগিতার সঙ্গে৷ ফলে টিকে থাকাই সবচেয়ে সমস্যার৷ বাংলার স্বর্ণশিল্পের কারিগরি ভারতবিখ্যাত হলেও এখানে প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে অনেকে গুজরাত, মুম্বই পাড়ি দেন৷ সম্প্রতি সেই ধারা অনেকটাই আটকে দেওয়া গিয়েছে একের পর এক জুয়েলারি পার্ক গড়ে৷ এবার লক্ষ্য, এখানকার দক্ষতা ও উৎকর্ষ বাংলার শিল্পেই লাগানো৷
একইভাবে মুর্শিদাবাদের জরি, উত্তরবঙ্গের বাঁশজাত শিল্পকেও তুলে ধরতে আনা হয়েছে এসএলপি-র আওতায়৷ বাজার ধরার জন্য বিপণি খোলা, বিশ্ববাংলার স্টলে পণ্য রাখার মতো উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন্ অনলাইন বিপণন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে চুক্তি করতে চায় রাজ্য৷ উল্লেখ্য, এ বিষয়ে সরকারের পাশে থাকছে আইআইএম৷ এরা এই দশটি ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্নরকম পেশাদারি সহায়তা করবে৷ মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের থেকে তা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে৷ এখন সবুজসঙ্কেত পেলেই শুরু হয়ে যাবে কাজ৷ অপেক্ষা সম্মতির৷