স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় মা-মাটি-মানুষ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে আজ শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সর্বসম্মতিক্রমে পরিষদীয় দলনেত্রী হিসাবে নির্বাচিত করলেন তৃণমূলের নবনির্বাচিত বিধায়করা৷ নেত্রী নির্বাচিত হয়েই সরকার গঠনের দাবি নিয়ে দুপুর দুটো নাগাদ রাজভবন পৌঁছলেন মমতা৷ সঙ্গে ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, মুকুল রায়৷ এর আগে কালীঘাটের বাড়িতে দলের বিধায়কদের বৈঠকে আরও বেশি করে মানুষের পাশে থেকে উন্নয়নের কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি৷ বলেন, “মানুষ আমাদের উপর অনেক ভরসা রেখেছে৷ অনেক বেশি সমর্থন দিয়েছে৷ আরও বেশি করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য উদয়-অস্ত সকলকে পরিশ্রম করতে হবে৷ মানুষের এই বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা দিতে হবে৷”
কালীঘাটের দলীয় অফিসে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকেই দলের জয়ী বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক শুরু হয়৷ সেখানেই সর্বসম্মতভাবে মমতাকে পরিষদীয় নেত্রী নির্বাচিত করা হয়৷ এদিকে, বিপুল জয়ের পর গোটা তৃণমূল দলই এখন উৎসবের মেজাজে৷ ঐতিহাসিক এই জয়কে সেলিব্রেট করতে গতকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে৷ জয়োৎসব চলবে দশদিন৷ কালীঘাটের বাড়িতেও চলছে উৎসব৷ গতকাল থেকেই ৩০-বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের টালির বাড়ি ঘিরে রয়েছে জনতার ঢল৷ শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার সকালেও দেশ-বিদেশ থেকে এসেছে শুভেচ্ছাবার্তা৷ গতকালই বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷
এদিন নেত্রীর বাড়িতে বৈঠকে যোগ দিতে দলের অধিকাংশ বিধায়কই কালীঘাটের অফিসে পৌঁছে যান৷ আকাশে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে জয়ী বিধায়করা একে একে পা রাখেন নেত্রীর অফিসে৷ ‘ভি’ দেখিয়ে প্রবেশ করেন অনেকেই৷ দূরের জেলার দু’-একজন বিধায়কের পৌঁছতে একটু দেরি হয়৷ জেলার বিধায়করা অনেকে আবার একসঙ্গে দলবেঁধে প্রবেশ করেন৷ নির্বাচিত বিধায়করা আসার অনেক আগে থেকেই দলের কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে নেত্রীর বাড়ির সামনে ভিড় করেছিলেন৷ গতকালের মতো এদিনও তারা আবির-মিষ্টি বিলিয়েছেন৷ স্লোগান দিয়েছেন নেত্রীর নামে৷ জয়ী বিধায়কদের পাশাপাশি এদিন বৈঠকে যোগ দিতে এসেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি, সহ-সভাপতি মুকুল রায়, যুব সভাপতি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের বহু সাংসদ৷ বাংলার রাজনীতির মহাকাশে এক নতুন অধ্যায় রচনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একক দল হিসাবে শুধু ক্ষমতায় ফেরাই নয়, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি গরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ রাজ্যজুড়ে বাম-কংগ্রেস জোটের সলিল সমাধি ঘটেছে৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, দুই দলের এই সমঝোতায় আদর্শের কোনও জায়গা ছিল না৷
২৭ মে রেড রোডে হবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান৷ শপথ গ্রহণ দেখার জন্য জনতার যে ঢল নামবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তাই রেড রোডে যেখানে প্যারেড হয় সেখানেই হবে অনুষ্ঠান৷ দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মমতা৷ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমন্ত্রণপত্রের চাহিদা তুঙ্গে৷ অনেকে মনে করছেন, এই চাহিদা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের টিকিটের চাহিদাকেও হার মানিয়ে দিয়েছে৷ সেই চাহিদাকে মাথায় রেখে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও তৈরি হচ্ছে৷ শপথে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে সেই তালিকা প্রস্তুতের কাজও চলছে তৃণমূল শিবিরে৷ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হবে৷ এদিকে, শুক্রবার সকাল থেকেও কালীঘাটের বাড়িতে ভিড়৷ দলের কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে বহু মানুষ আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানাতে৷ ফোনে, এসএমএসেও আসছে শুভেচছা বার্তা৷ ফোন ধরতে ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মানিক মজুমদার, রতন মুখোপাধ্যায়দের৷ অন্য রাজনৈতিক দলের বিধায়করাও ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে খবর৷ গতকাল মমতাকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা৷ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিভিন্ন্ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও৷ শুভেচ্ছা জানান কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও৷ জানা গিয়েছে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মোদি-সোনিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী৷
The post পরিষদীয় নেত্রী নির্বাচিত হয়ে মমতা গেলেন রাজভবন appeared first on Sangbad Pratidin.