ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘কাটমানি নেওয়া চলবে না৷ আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন৷ নিজেদের শুধরে নিন’৷ লোকসভা নির্বাচনে হতাশাজনক ফলাফলের পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ঠিক এই ভাষাতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ হুঁশিয়ারির সুরে জানালেন, এবার আর কোনও রেয়াত নয়৷ এই ধরনের অভিযোগ এলেই কড়া শাস্তি দেওয়া হবে অভিযুক্ত নেতাকে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে তাঁকে৷ এবং আইন মেনে যথাযথ ব্যববস্থাও নেওয়া হবে অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে৷
[ আরও পড়ুন: শহরে উষসী কাণ্ডের ছায়া, এবার হেনস্তার শিকার সোনাজয়ী মহিলা বক্সার ]
জানা গিয়েছে, কালীঘাটে হওয়া শুক্রবারের সাংগঠনিক বৈঠকে প্রথম থেকেই রণংদেহী রূপে ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুরু থেকেই ধরে ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন তিনি৷ জনসংযোগে ব্যর্থ হওয়ায় জেলার নেতাদের কার্যত তুলোধনা করেন তিনি৷ মানুষ যে তাঁদের প্রতি বিতঃশ্রদ্ধ তা বুঝিয়ে দেন দলনেত্রী৷ বলেন, ‘‘মানুষের কাছে না যাওয়ায় লোকসভা নির্বাচনে দলের এই বিপর্যয় হয়েছে৷ দলে থাকতে হলে সঠিক ভাবে কাজ করতে হবে৷ কেউ তা না মানতে চাইলে, দল থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন৷’’ সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ এলাকায় বালি খাদান চালানোয় নেত্রীর তোপের মুখে পড়েন তিনি৷ তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে আগে যেখানে ষাট হাজারের লিড ছিল তৃণমূলের, এবারের লোকসভায় কীভাবে তা কমে ১২ হাজার হল, সেই নিয়ে প্রশ্ন করেন দলনেত্রী৷ এলাকায় না যাওয়ার অভিযোগে একই ভাবে সুপ্রিমোর তোপের মুখে পড়েন নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যুৎ ঘোষ৷
[ আরও পড়ুন: মিশন-২০২১, এখন থেকেই রণনীতি সাজাতে দিল্লিতে বঙ্গ নেতাদের জরুরি তলব শাহর ]
সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জন্য নয়া কোর কমিটিতে তৈরি করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যার মাথায় বসানো হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে৷ এছাড়া কমিটিতে রাখা হয়েছে দলের রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া, নির্মল ঘোষ ও অমূল্য মাইতিকে৷ এখানেই শেষ নয়, জেলার তফসিলি সেল ও মহিলা সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিউলি সাহাকে৷ সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কওসর আলি খানকে৷ তৃণমূলের শ্রমিক সেলের নেতা করা হয়েছে নির্মল ঘোষকে৷ এবং সভানেত্রী করা হয়ে উত্তরা সিংকে৷ এছাড়া নেত্রীর নির্দেশ, এবার থেকে সপ্তাহে একবার করে বৈঠকে বসতে হবে কোর কমিটিকে৷ জেলার কাজকর্ম কেমন এগোচ্ছে, সেই খবরা খবর রাখতে হবে কমিটির সদস্যদের৷ অঞ্চল ও বুথ কমিটি তৈরি করতে হবে৷
[ আরও পড়ুন: ‘সংখ্যালঘু নয়, প্রত্যেকের জন্য স্কুলে ডাইনিং হল’, বিতর্কে জল ঢেলে নয়া ঘোষণা রাজ্যের ]
আগেই শুভেন্দু অধিকারীর দায়িত্ব বাড়িয়েছেন দলনেত্রী৷ এবং দায়িত্ব পেয়েই জেলায় জেলায় কাজ শুরু করেছেন তিনি৷ জানা গিয়েছে, শুক্রবারের বৈঠকে নাম না করে ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন এসপি তথা সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ভারতী ঘোষ এবং মুকুল রায়কে একহাত নেন শুভেন্দু অধিকারী৷ বলেন, ‘‘এক পুলিশ অফিসার ও এক নেতার উপর ভরসা করে আমরা ভুল করেছিলাম৷ আমাদের ক্ষতি হয়েছে৷’’ পুলিশের উপর দলের নেতাদের ভরসা কমাতে বলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ তৃণমূলের জন্মলগ্নের উদাহরণ টেনে তিনি নির্দেশ দেন, পুলিশের উপর নির্ভরতা কমিয়ে, আগের মতো লড়াই করতে হবে দলের সদস্যদের৷ সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর৷ যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এদিনের বৈঠকে এসেছিলেন তিনি৷ বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেরিয়ে যান৷
The post ‘আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন’, সাংগঠনিক বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাদের তোপ মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.