তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: সন্দেহ এড়াতে শিলিগুড়িতে (Siliguri) নাম ভাঁড়িয়েই ঘাঁটি গেড়েছিল পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI) চর গুড্ডু কুমার। পাক চর সন্দেহে শিলিগুড়ি থেকে ধৃত গুড্ডুকে প্রাথমিক জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ভাড়া নিতে দেওয়া নথিও ভুয়ো। স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (STF) ও সেনার গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, গুড্ডু কুমার তার আসল নাম নয়। যদিও এখনও পর্যন্ত জেরায় তা স্বীকার করেনি ধৃত পাকিস্তানি চর। বিষয়টির সত্যতা জানতে বিহারের চম্পারণেও এসটিএফের স্পেশ্যাল টিমের যাওয়ার কথা রয়েছে।
গত বুধবার শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন এলাকা থেকে পাকিস্তানি (Pakistan) চর সন্দেহে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তাকে জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিকভাবে ওই চর পরিবার নিয়ে ভারতনগরে থাকে বলে দাবি করলেও তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গুড্ডুর স্ত্রী-পুত্র ওই বাড়িতে থাকত না। বৃহস্পতিবার সকালে গুড্ডুকে নিয়ে শিলিগুড়ির ভারতনগর এলাকার দেবাশিস কলোনিতে তার ভাড়া বাড়িতে যায় গোয়েন্দাদের একটি দল। যে শান্ত, আপাত নিরীহ প্রতিবেশীকে এতদিন খুবই ভাল মানুষ বলে এলাকাবাসীরা জানতেন, তাকেই অপরাধীর বেশে দেখে রীতিমতো চমকে যান তাঁরা।
গুড্ডুর বাড়ির মালিক পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী সঞ্জয় কুমার সুশীল তো কোনওভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ওই ছেলে দেশবিরোধী কাজ করতে পারে! তাঁর কথায়, “আমার ছেলের গৃহশিক্ষক ছিল গুড্ডু। অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের শিক্ষিত ভদ্র ছেলে দেখেই তার বাড়তি আয়ের বন্দোবস্ত করতে নিজের টোটো ওকে চালাতে দিয়েছিলাম। ভাবিনি এমন দিন দেখতে হবে।” সঞ্জয়বাবুর ওই বাড়িতে ন’টি ঘরে ন’টি পরিবার ভাড়া থাকে। গুড্ডুর ঘটনা জানার পর অন্যান্য ভাড়াটেদেরও একই অবস্থা। প্রতিবেশী রিনা যাদব বলেন, “কখনও কারও সঙ্গে ঝগড়া করা তো দূরের কথা, মাথা উঁচু করে কথাও বলত না গুড্ডু। রাতে টোটো নিয়ে বেড়িয়ে যেত সে। কিছুতেই ভাবতে পারছি না এমন কীভাবে হল?”
[আরও পডুন: আসানসোল দুর্ঘটনা: হাই কোর্টে মিলল রক্ষাকবচ, স্বস্তিতে বিজেপি নেত্রী চৈতালি তিওয়ারি]
তবে প্রতিবেশীরা যাই বলুক না কেন, এসটিএফ জানতে পেরেছে, বাড়ির মালিকের থেকে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার খোঁজ নিত গুড্ডু। শিলিগুড়ি শহরের সমস্ত এলাকা চেনার প্রবল ইচ্ছে ছিল তার। শিলিগুড়ি শহরের পাশাপাশি সীমান্ত লাগোয়া সিকিমের খোঁজখবরও নিত। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারে থাকাকালীন গৃহশিক্ষক ছিল গুড্ডু। সেখান থেকে কীভাবে চরবৃত্তির সঙ্গে জুড়ে গেল, সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে তাঁদের। এর পাশাপাশি গুড্ডুর হ্যান্ডলার কে, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মাথায়।
পাকিস্তানে বসে থাকা কোনো হ্যান্ডলারকে (Handlar) সরাসরি যোগাযোগ করত কী সে? নাকি ভারতে বসে থাকা অন্য কোনো চরকে খুঁটিনাটি তথ্য দিত সেদিকেই নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। এসটিএফ সূত্রের খবর, গুড্ডুর বাজেয়াপ্ত করা ফাইল থেকে একাধিক ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করার তথ্য মিলেছে। সেই থেকেই তাদের ধারণা ভারতে থাকা কোনও হ্যান্ডলারকেও তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারে ওই পাকিস্তানি চর। যদিও ডিজিটাল যুগে ভারতীয় নম্বর থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) মাধ্যমে যোগাযোগ করাও সম্ভব।
[আরও পডুন: হাই কোর্টে অস্বস্তিতে রবার্ট ভঢরা! জমি দুর্নীতি মামলা বাতিলের আরজি খারিজ]
উল্লেখ্য, পুজোর আগে কালিম্পং থেকে আরও এক পাকিস্তানি চর পীর মহম্মহ গ্রেপ্তার হয় এসটিএফের হাতে। ওই চরও একইভাবে সেনাবাহিনীর গতিবিধি জানাত। গুড্ডুর কাজের ধরনও একইরকমের থাকায় গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, দার্জিলিং, কালিম্পং-সহ পাহাড়ের একাধিক এলাকায় একইভাবে ছোট ছোট চর মোতায়েন করে থাকতে পারে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। যাদের মূলত কাজ একেবারে তৃণমূলের স্তরের সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে নজর রাখা। যেহেতু, বাগডোগরা এলাকাতে ত্রিশক্তি কর্পস আছে। সেনাবাহিনী, বায়ুসেনার ঘাঁটি রয়েছে। একইসঙ্গে সিকিম কয়ে নাথু-লা যাওয়ার জন্য শিলিগুড়িকে ব্যবহার করতেই হবে। তাই এখানে একাধিক চর মোতায়েন করে হামলার নীল নকশা তৈরি করতে সুবিধে হবে বলেই মনে করছে গোয়েন্দারা।