ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: অপারেশন হয়। কিন্তু লাইসেন্স নেই। অথচ বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগী জোগাড় করে একের পর এক অস্ত্রোপচার করা হয়। এমন মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে খাস কলকাতার শরৎ বোস রোডের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। সেখানে ভুল চিকিৎসার মাশুল দিতে হল এক রোগীকে। বাঁ পা বাদ চলে যায় রোগীর। এই ঘটনার পর অন্তবর্তীকালীন আদেশ হিসেবে বেআইনি কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। চিকিৎসার গাফিলতির পর এসএসকেএমে(SSKM) রোগীর অস্ত্রোপচার করে বাঁ পা বাদ দিতে হয়। তার কাজগপত্রও চেয়ে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন চারু মার্কেটের বাসিন্দা দেবলীনা রায়। সোমবার স্বাস্থ্য কমিশনে এই মামলার শুনানি হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বোস রোডে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দু’টো শাখা আছে। একটি ৯৬,২/এ এবং আর একটি ৭৫ নম্বর। এই ঘটনাটি ৯৬,২\এ তে ঘটেছে। এটি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু লাইসেন্সে দেখেছি, লেখা রয়েছে প্যাথলজিক্যাল কালেকশন সেন্টার। এখানে কোনও টেস্ট হয় না শুধু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর এন্ডোস্কোপি হয় ও ১০ জন ডাক্তারের ক্লিনিক। ওপিডির মতো চলে। এই ক্লিনিকটি (Clinic) হায়দরাবাদের বেসরকারি এক হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও রয়েছে। এরা বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগী জোগাড় করে। অভিযোগকারী রোগীর বাবা জিতেন্দ্রনাথ রায়ের পায়ের শিরায় ভেরিকোজ ভেইনের সমস্যা ছিল। পায়ে ব্যথা হওয়ায় ওই সেন্টারে বলা হয় ছোট অস্ত্রোপচার হবে। এরপর ইনট্রাভেনাস অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার হয়।”
এদিন শুনানিতে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক হাজির ছিলেন। কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, “অস্ত্রোপচার চলাকালীন কিংবা অস্ত্রোপচারের পর রোগীর কোনও জটিলতা হলে তখন কি করে সামাল দেওয়া হয়? শুনানির সময় জিজ্ঞাসা করলে, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তরফে বলা হয় তাদের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।”
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উপেক্ষা করেই রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন, তীব্র নিন্দা ‘জাগো বাংলা’য়]
সব শুনে অসীমবাবু বলেন, “এরকম তো হতে পারে না। যেখানে চুক্তিবদ্ধ সেখানে অস্ত্রোপচার করা উচিত। রোগীর কী কী হয়েছে তা সবই প্রেসক্রিপশনে লেখা রয়েছে। আমরা বলেছি অবিলম্বে ওই সেন্টারে এই সব বন্ধ করতে হবে। যে লাইসেন্স আছে। শুধু সেইটুকুই কাজ করতে হবে। ওপিডি (OPD), নমুনা সংগ্রহ ও এন্ডোস্কোপি ছাড়া আর কোনও কিছু করবে না। এটা তো হাসপাতাল নয় যে অস্ত্রোপচার করবে। সেই পরিকাঠামোও নেই। স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে বলেছি কড়া নজর রাখতে। যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। ওই রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজ এখনও জমা পড়েনি তাই রায় স্থগিত রাখা হয়েছে। দু’সপ্তাহ বাদে ফের মামলার শুনানি হবে। তখন রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।