সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রকৃতির সহ্য শক্তি অসীম। কিন্তু তাকেও চ্যালেঞ্জ করে বসেছে মানব সভ্যতা! প্রকৃতির পালটা রোষের মুখে কার্যত দিশেহারা জীবন। বাঁচার পথ খুঁজতে প্রতি বছর ৬ জুন ঘটা করে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আয়োজিত হয় নানা সম্মেলন, বৈঠক। নিরন্তর গবেষণা চলে প্রকৃতিকে শান্ত করার প্রচেষ্টায়। কিন্তু, বদলায় কি কিছু? উত্তর, না।
কিছু যে বদলায় না, তার অন্যতম বড় প্রমাণ ২০২০ সালে কেবল ভারতেই (India) প্রকৃতির রোষে গৃহহীন হয়েছেন অন্তত ৩৯ লক্ষ মানুষ। প্রকৃতির পালটা মারে বিশ্বের চতুর্থ ক্ষতিগ্রস্ততম দেশ হল ভারত। প্রথম তিন ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হল চিন (China), ফিলিপিন্স এবং বাংলাদেশ। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রমেন্টের (Centre for Science and Environment) সমীক্ষার রিপোর্টে এমন কথাই জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ৭৬ শতাংশ জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে ঘটেছে।
জম্মু-কাশ্মীরে হিমানী সম্প্রপাত, ভূমি ধসের মতো ঘটনা, তামিলনাড়ুর ভয়াল বন্যা, উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ হ্রদের বাধভাঙা প্লাবন বা নিভার, বুরেভির মতো সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আসলে জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফলাফল। ২০০৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বছরে গড়ে ৩৭ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রকৃতির তাণ্ডবে। জলবায়ু পরিবর্তন ভারতে ভূমিকম্প (Earthquake), সুনামি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই ধরণের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর ভারতে গড়ে ২৩ লক্ষ মানুষ মাথার ছাদ হারান। ১৯৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারতে সরাসরি আঘাত হেনেছে মোট ১২৭টি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)। তারমধ্যে ২০১১ থেকে ২০২০-র মধ্যে ৩৩টি ঘূর্ণিঝড় এসেছে। শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা পাঁচ।
[আরও পড়ুন: মহাশূন্যে বসেই চা-কফি, টাটকা আপেল, লেবুর স্বাদ পাবেন নভোচররা, পৌঁছে দেবে রকেট]
আমফানের দুঃসহ স্মৃতি এখনও টাটকা। গত বছর ২০ মে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় প্রায় ৯০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। চার হাজারের বেশি গবাদি ও গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গের জনজীবন কার্যত তছনছ করে দিয়েছিল আমফান। ঘূর্ণিঝড় নিভারের দাপটে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে মৃ়তু্য হয়েছিল ১২ জনের। প্রায় ১১ হাজার পশুসম্পদ নষ্ট হয়েছিল। বুরেভির দাপটে মৃত্যু হয় ন’জনের। দু’শোর বেশি পশুসম্পদ নষ্ট হয়। ঘূর্ণিঝড় গতি ভারত মহাসাগর থেকে ছুটে গিয়েছিল সুদুর সোমালিয়ায়। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালে ২১টি মূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাণ কেড়েছে কমপক্ষে ১,৩৭৪ জনের। এর মধ্যে অতিবৃষ্টি, বন্যা, স্থানীয় ঝড়ের জেরে মৃত্যুর ঘটনা ৫১ শতাংশের বেশি। বজ্রাঘাত ৩৩ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ। সবথেকে বেশি বিহারে ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ১৮৯ জন এবং ঝাড়খণ্ডে ১৪৪ জনের প্রাণ গিয়েছে প্রকৃতির রোষে। অসমের বন্যা কেড়েছে ১২৯টি প্রাণ। এছাড়াও মহারাষ্ট্রে ৭৩ জন এবং মধ্যপ্রদেশ, কেরলে ২১ জন করে প্রকৃতির বলি হয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডে ফি বছর আমাদের রাজ্যের ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। বাদাবন কখনই মনুষ্য বাসযোগ্য ছিল না। নির্বিচারে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যর যে নিধনযজ্ঞ শুরু হয়েছে, সুন্দরবনের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ প্রতিমূহুর্তে তার মাশুল দিচ্ছে। ঘন বাদাবন আবহমানকাল ধরে বহু সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিহত করেছে। কিন্তু আজ তার বড় যত্নের প্রয়োজন। তা না হলে, সুন্দরবন সহ কলকাতারও বড় বিপদ আসন্ন। ঘোড়ামারা দ্বীপের নিমজ্জিকরণ কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে!