সুরজিৎ দেব, গঙ্গাসাগর: প্রচণ্ড কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার দাপটের মধ্যেই গঙ্গাসাগরে চলছে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান। অগুনতি মানুষের ভিড়ে ঠাসা সমুদ্রসৈকত। মোক্ষলাভের আশায় ডুব দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে তীর্থযাত্রীরা দলে দলে চলেছেন কপিল মুনির আশ্রমের দিকে। উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) কানপুর থেকে আসা রূপসা দেবী, গুজরাটের সুনীতা দেবীরা দারুণ খুশি। এবার প্রথমবারই তাঁরা সাগরমেলায় এসেছেন পরিজনদের সঙ্গে। দুজনেই জানান, অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল সাগরে ডুব দিয়ে কপিল মুনির মন্দিরে পুজো দেওয়ার। সেই স্বপ্ন আজ তাঁদের পূরণ হল। অনেকে আবার হারিয়েছেন স্নানে নেমে।
মানতরক্ষায় কপিল মুনিকে ভক্তির ডালি নিবেদন করে ঘরমুখো ভিড় এগিয়ে চলেছে কচুবেড়িয়া ঘাটের দিকে। স্নানে নেমে অনেকেই হারিয়ে ফেলছেন তাঁর প্রিয়জনদের। ভিড় বাড়ছে বজরং পরিষদের নিখোঁজ মানুষের শিবিরে। সমুদ্রস্নান সেরে উঠে পরিবার পরিজনকে হারিয়ে দিশেহারা বিহারের পাটনার বাসিন্দা মীনাদেবী। দীর্ঘসময় সৈকতে পরিজনদের খুঁজে বেড়িয়ে শেষমেষ ক্লান্ত হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বজরং পরিষদের শিবিরে। ওই আশ্রয়শিবিরে তাঁর মত স্বজনহারা হয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা গেল উত্তরপ্রদেশের ইন্দু দেবী, ঝাড়খণ্ডের ছোটা বাবু আরও অনেককেই। সাগরসৈকত দিয়ে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়া তীর্থযাত্রীকে নিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে অ্যাম্বুল্যান্স। পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, সাগরপ্রহরীর স্বেচ্ছাসেবকরা সতর্ক নজর রেখে চলেছেন সমুদ্রে ও সৈকতে। সাগরমেলায় থেকে গোটা মেলার তদারক করছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিম হাজরা, পুলক রায়, পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু ও ইন্দ্রনীল সেনরা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নীলিমা বিশ্বাস ও বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদারও মেলায় উপস্থিত হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: জনতার সাহায্য করা দরকার, সেনা সরাতে মালদ্বীপের চাপের মুখেও মানবদরদি ভারত]
গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পরিষদের লোকজন গ্রিন মেলা করার লক্ষ্যে গঙ্গাসাগরকে সব সময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টায় রয়েছেন। ‘শুদ্ধিকরণ প্রতিবার, গঙ্গাসাগরের অঙ্গীকার’ এই স্লোগানকে সঙ্গে নিয়েই গোটা মেলা চত্বর ও সাগরতটে জিবিডিএ-র কর্মীরা সবসময়ই সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন রকমারি প্লাস্টিক ও আবর্জনা। এদিকে সাগরমেলায় এসে ঠান্ডায় ও বয়সজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় এপর্যন্ত ৬ জনকে এয়ার লিফটিং করে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। গতকাল অসুস্থ হয়ে পড়া দুই ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে সাগরমেলায়। তাঁদের মধ্যে একজন সত্তরোর্ধ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এবং অন্যজন অম্বিকানগরের বাসিন্দা ৬৩ বছরের রাম নাভাল। এ পর্যন্ত সাগরমেলায় এই নিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো মোট চারজন। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও সহ জেলা, মহকুমা ও রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা মেলায় উপস্থিত থেকে সতর্ক পাহারায় রয়েছেন। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: জয়ন্ত সুকুল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে মেলায় আসা তীর্থযাত্রীদের ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরিষেবায় ব্যস্ত। এদিকে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে গত রাত থেকে মুড়িগঙ্গা নদীতে দীর্ঘক্ষণ ভেসেল পরিষেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন তীর্থযাত্রীরা।