স্টাফ রিপোর্টার: আজ বিভাগ খোলা আছে। কাল থাকবে তো? জেলাজুড়ে একাধিক হাসপাতালে ঝড়ের বেগে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেই আবহে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আজ পঞ্চাশ তো কাল একশো। দ্বিগুণ হারে ভাইরাসের কবলে ডাক্তারবাবুরা । শহর তো বটেই, গোটা রাজ্যের সিংহভাগ হাসপাতালে স্টেথোধারীরা হোম আইসোলেশনে। অর্থাৎ ন্যূনতম ৭ দিনের জন্য বেডরেস্ট। একটা সপ্তাহ রোগী দেখা বন্ধ রাখতে হবে। এমতাবস্থায় রোগীরা কী করবে?
অবস্থা এমনই, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে দু’ তিনটি বিভাগ যে কোনও মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। জেনারেল সার্জারি, মেডিসিন, ত্বকরোগ বিভাগে নব্বই শতাংশ চিকিৎসক কোভিড পজিটিভ। শেষ খবর অনুযায়ী, বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলাতেও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। সেখানে কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক ৭/৮ জনের বেশি আক্রান্ত না হলেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে হাসপাতালের অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। সে বিভাগের সকলেই আক্রান্ত। যে কোনও দিন তালা ঝোলানো হবে দরজায়। সাগর দত্ত হাসপাতালের চিকিৎসক, অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সম্পাদক ডা. মানস গুমটার কথায়, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, যে কোনও দিন শুনতে হবে, ১০০ শতাংশ চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এক্ষুনি ব্যাকআপ প্ল্যান তৈরি করতে হবে। নয়তো অদূর ভবিষ্যতে সমস্ত ডাক্তারই থাকবেন হোম আইসোলেশনে।
[আরও পড়ুন: হাতে চুড়ি, পরনে মহিলাদের পোশাক, শিলিগুড়িতে নয়ানজুলি থেকে উদ্ধার নরকঙ্কাল]
এতদিন কোভিডমুক্ত ছিল বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্যাসাগর হাসপাতালের সুপার জানালেন, সেই চেষ্টা শেষ। হাসপাতালের ১ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর থেকে যে অগুনতি সংক্রমিত হবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত সুপার। আবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে এত চিকিৎসক আক্রান্ত যে হিসাব দিতে পারছেন না সুপার নীলাঞ্জনা সেন। তিনি জানিয়েছেন, গুণে শেষ করা যাবে না। সঠিক সংখ্যা জানাতে সময় লাগবে। কোভিড পজিটিভ শুধু ডাক্তাররাই নন, হাসপাতালের প্রশাসনিক প্রধানরাও। এম আর বাঙুর হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কোভিড পজিটিভ, আপাতত নিভৃতবাসে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জন দস্তিদারও।
তবে শুধু চিকিৎসক নন, নার্সদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় চিন্তিত নীলাঞ্জনবাবু। ইতিমধ্যেই খবর এসেছে, ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে ২৫ জন নার্স কোভিড আক্রান্ত। এর মধ্যে রয়েছেন নার্সিং সুপার, ডেপুটি নার্সিং সুপার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আরও টেস্ট করলে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। নার্সেস ইউনিটির পক্ষ থেকে রাজ্য সভানেত্রী পার্বতী পাল জানিয়েছেন, ডাক্তার রোগীর সামনে সামান্য সময়ের জন্য আসেন। ২৪ ঘণ্টা রোগীর দেখভাল করেন একজন নার্স। নার্সরা আক্রান্ত হলে বিপাকে পড়বে রোগীর পরিবার।
বৃহস্পতিবার শেষ খবর অনুযায়ী, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আরও ১০০ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড আক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৯০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এই হাসপাতালে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৫। কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালেও করোনার থাবা। ডাক্তারি পড়ুয়া, চিকিৎসক, নার্স মিলিয়ে জেএনএম হাসপাতালে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭।