নব্যেন্দু হাজরা: গাড়ি আনফিট। মানে সিএফ ফেল। ইন্সুরেন্স ফেল, পলিউশন সার্টিফিকেটও ফেল। সবকিছু ফেল থাকা সত্ত্বেও ডবলু বি ৬১এ২৪৯২ ট্রাকটি অতিরিক্ত মাল চাপিয়েই ছুটছিল মঙ্গলবার রাতে। ধূপগুড়িতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে যে ওভারলোডেড পাথরবোঝাই ডাম্পারের বিরুদ্ধে, রাস্তায় সেটি চলছিল বেআইনিভাবেই। অন্তত পরিবহণ দপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্য তেমনই বলছে। গাড়িটি ২০০৯ সালের ১৭ জুনে মাথাভাঙ্গা এআরটিও অফিসে রেজিস্টার্ড হয়। ২২ মে ২০২০ সালে সেটির ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আর ধোঁয়া ফেল করেছে আরও এক বছর আগে। অর্থাৎ একটা আনফিট গাড়িতেই ওভারলোডেড পণ্য নিয়ে চালাচ্ছিলেন চালক। মঙ্গলবার রাতে ধূপগুড়ির জলঢাকা সেতুর কাছে ময়নাতলি এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রথমত, ওভারলোডেড ট্রাক বা ডাম্পার এখনও চলছে বহাল তবিয়তে। দ্বিতীয়ত, সরকার যতই মালিকদের গাড়ির সিএফ করিয়ে নেওয়ার আবেদন করুক, ছাড় দিক, পেনাল্টি মকুব করুক, তাতে ন্যূনতম হেলদোল নেই তাদের। আর তৃতীয়ত, সরকারের কোনও নজরদারিও নেই এই বেআইনি ওভারলোডেড ট্রাক বন্ধে। যে কারণে তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই কাজ মূলত করেন মোটর ভেহিক্যালস ডিপার্টমেন্টের (Motor Vehicles Department) নন টেকনিক্যাল স্টাফরা।কিন্তু তারা যে নজরদারি দিচ্ছেন না তা জানাচ্ছেন ট্রাক মালিকরাই। তার ফলে রাস্তারও ক্ষতি হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনাও। তাদের দাবি, যে গাড়িতে ১৬ টন মাল তোলার কথা তাতে ৫০ টন মাল উঠছে। ৯ টনের গাড়িতে ৩০ টন। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। তাই তারা ট্রাকের বহন ক্ষমতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি, লোডিং পয়েন্ট থেকে ওভারলোডিং বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের বক্তব্য, সত্যিই যদি ধরপাকড় শুরু হতো, তবে গাড়ির মালিকরাও আগে থেকে সিএফ করতো। এড়ানো যেত দুর্ঘটনাও।
[আরও পড়ুন: নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে উদ্যোগ SBSTC’র, চালু নতুন বাস, বদলাচ্ছে টার্মিনাসের নামও]
লকডাউনের কারণে বহু গাড়িই সিএফ করাতে পারেনি। তাদের জন্যই জরিমানায় ছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতেও গড়িমসি গাড়ির মালিকদের। ফলে হাজার হাজার আনফিট গাড়িই রোজ ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা রাজ্যে। বাড়ছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। যেমনটা মঙ্গলবার রাতে ঘটে গেল ধূপগুড়িতে (Dhupguri)। ঝড়ে গেল ১৪টা প্রাণ। ট্রাক মালিকদের দাবি,পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের মদতেই এই কাজ হচ্ছে। আর নজরদারির অভাবে শহরে ঘুরছে আনফিট গাড়ি। ফেডারেশন অফ ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাক অপরেটর্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, “ওভারলোডিং কিছুতেই বন্ধ করছে না। সরকার সব জানে। ওভারলোডিংয়ের জন্যই এতো দুর্ঘটনা। আমরা ওভারলোডিং বন্ধ সহ একাধিক দাবিতে ২৯ তারিখ পরিবহণ ভবন ঘেরাও করব।”