ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য ও নন্দন দত্ত: বীরভূমের মাড়গ্রামে বাড়ল মৃতের সংখ্যা। এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে প্রাণ গেল তৃণমূল নেতার ভাইয়ের। এখনও জখম একজনের চিকিৎসা চলছে। এদিকে, ওই তিন তৃণমূল কর্মীকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ল কে, তা নিয়ে পরিবার ও ঘাসফুল শিবিরের মধ্যে মতানৈক্য। নিহত ও আহতদের পরিবারের দাবি, কংগ্রেসের বোমাবাজিতে এই ঘটনা ঘটল। তবে ফিরহাদ হাকিমের দাবি কিছুটা অন্যরকম। মাড়গ্রামের ঘটনায় ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী যোগের আশঙ্কা তাঁদের। যদিও পুলিশের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়, জানান তিনি।
শনিবার রাত থেকেই উত্তপ্ত বীরভূমের রামপুরহাটের মাড়গ্রামের ধুলফেলা গ্রাম। মাড়গ্রাম এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ভুট্টো শেখের ভাই লাল্টু শেখ, তাঁর বন্ধু নিউটন শেখ, সুজাউদ্দিন নামে তিন তৃণমূল কর্মীকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি করা হয় বলেই অভিযোগ। বোমাবাজির পর রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে যান তাঁরা। সেই সময় তাঁদের লোহার শাবল-সহ নানা ধরনের ভারী বস্তু দিয়ে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। পথেই মৃত্যু হয় নিউটন শেখের। জখম লাল্টু শেখকে প্রথমে রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ট্রমা কেয়ার ইউনিটেই রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁর। হাসপাতাল সূত্রে খবর, লাল্টুর চিকিৎসায় ৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং পরপর তিনবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে লাল্টুর প্রাণ গিয়েছে বলেই জানান চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: NEET’এর প্রস্তুতি নিতে কোটায় যাওয়াই কাল, ছ’তলা থেকে পড়ে মৃত্যু বাংলার ছাত্রের]
তার ঠিক কিছুটা আগে রবিবার সকালে তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের ভাইকে দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে যান ফিরহাদ হাকিম। মাড়গ্রামের এই ঘটনার নেপথ্যে মাওবাদী যোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি তিনি। ফিরহাদ বলেন, “মাড়গ্রামে বাইরে থেকে লোক এনে ষড়যন্ত্র করছে। বীরভূমের পাশে ঝাড়খণ্ড। ওখানে মাওবাদীরা আছে। পুলিশের রিপোর্ট না পেলে বলতে পারব না কে করেছে।” আহত এবং নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে বীরভূমকে দখল করা যাবে না বলেও বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দেন ফিরহাদ। যদিও বোমাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছে কংগ্রেস। বীরভূমে কংগ্রেসের সংগঠন কোথায়, পালটা প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী আবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, অনুব্রতহীন বীরভূমের দায়িত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেওয়ার পর থেকে বোমাবাজি শুরু হয়েছে।
এদিন মাড়গ্রামে নিহত নিউটন শেখের বাড়িতে যান মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, হাসনের তৃণমূল বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লকের সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়, স্থানীয় মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিবি ভট্টাচার্য। নিউটনের স্ত্রী ফিরদৌসি বেগমের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানান ফিরদৌসি। এদিকে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত শেখ সুজাউদ্দিন, তার দুই ছেলে শেখ লাকি ও শেখ বাপি, শেখ আকবর, শেখ গব্বর, ছোট্টু মাল নামে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সকলেই কংগ্রেস কর্মী বলেই খবর। দু’জন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর পর থেকে উত্তপ্ত মাড়গ্রাম। অভিযুক্ত জহর শেখের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে। বগটুই কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তাই গ্রামে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।