গৌতম ব্রহ্ম: ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে মশা বংশবিস্তার করতে পারে না। এই সত্যের উপর ভর করেই ডেঙ্গু মোকাবিলায় উত্তুরে হাওয়ার দিকে তাকিয়ে তিলোত্তমা কলকাতা তথা গোটা রাজ্য।
মশা দমনে রাজ্য প্রায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক পাঠানো হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গু টেস্টের ব্যবস্থা হয়েছে অনেক হাসপাতালে। নজরদারির জন্য ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ডেঙ্গুর (Dengue) আতঙ্ক ডালপালা মেলছে। বাড়ছে সংক্রমণ। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। যদিও সংক্রমণের হার, পজিটিভিটি রেট আগের তুলনায় কমেছে বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। কিন্তু দুশ্চিন্তা কমছে কই! এখনও ডেঙ্গুর অন্যতম বাহক দুই মশা এডিস এলবোপিকটাস ও এডিস ইজিপ্টাই বংশবিস্তার করে চলেছে। মশার জীবনচক্র ভাঙতে না পারলে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত কমানো মুশকিল। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে এখন উত্তুরে হাওয়ার দিকেই তাকিয়ে মহানগর। পতঙ্গবিদদের পর্যবেক্ষণ, ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে মশা বংশবিস্তার করতে পারে না। তাই প্রবল গরম বা ঠান্ডায় ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
[আরও পড়ুন: ফিরহাদের ‘বাঘ’ মন্তব্যকে হাতিয়ার করে জামিনের বিরোধিতা, ফের জেল হেফাজতে অনুব্রত]
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পারদ পনেরোর ঘরে নামার পূর্বাভাস দিয়েছে অ্যাকু ওয়েদার। তবে সেই পারদ পতন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। পনেরোর নিচে পাকাপাকিভাবে নামতে ডিসেম্বের দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যাবে। দীর্ঘদিন কীট-পতঙ্গের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা করছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অর্ণব চক্রবর্তী। জানালেন, পরিবেশের নানা ফ্যাক্টর কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে থাকে। যেমন মশার ডিম পাড়া, একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, শূককীটের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা – সব নির্ভর করে তাপমাত্রার উপর। ষোলোর নিচে নামলেই মশার জীবনচক্রে যতিচিহ্ন পড়তে শুরু করে। আর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে চলে গেলে মশার জীবনচক্র তছনছ হয়ে যায়। আসলে ডিম পাড়া থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হওয়া পর্যন্ত মশার জীবনচক্রে চারটে পর্যায় থাকে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা তাপমাত্রা চাই। যা না পেলে পরের পর্যায়ে যেতে পারে না মশারা। তবে ১৬ ডিগ্রির কম তাপমাত্রা যে কোনো মশার পক্ষেই বিপজ্জনক। তবে তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। যেমন লার্ভার শিকারিদের উপস্থিতি। লার্ভার খাবারের প্রতুলতা। তবে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ করা যে বেশ কঠিন, সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে তা সম্প্রতি মনে করিয়ে দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ ড. দেবাশিস বিশ্বাস। জানিয়েছেন, দেখতে ভাল লাগলেও মশা মারতে কামান দাগার (ফগিং) তেমন কার্যকারিতা নেই।
তাঁর পর্যবেক্ষণ, মশার বংশবিস্তারের জায়গায় লাগাম পরানোই মশা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় উপায়। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা পুর এলাকায় ১১,৮১৩ কুয়ো, ১২,৭৫১ খোলামুখ নর্দমা, ১৯২৩ পুকুর, ৪৫২৮ নির্মীয়মাণ আবাসন এলাকা ও ৫০২৯টি ফাঁকা জমি। এগুলো সবই মশার আতুঁড়ঘর। কুয়োর ৮৫ শতাংশ, ড্রেনের ৮৮ শতাংশ, পুকুরের ৭৭.৫ শতাংশ দক্ষিণ কলকাতায়। আঁতুড়ঘর বেশি থাকায় দক্ষিণ কলকাতায় মশার বাড়বাড়ন্ত বেশি। ডেঙ্গুর ৭৯-৮০ শতাংশই দক্ষিণে। ১৫ ও ১৬ নম্বর বরোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে কম।