সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদের নির্বাচন (Bangladesh Election) ঘিরে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলির মধ্যেও উৎসাহ বাড়ছে। একদিকে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) সরকার চাইছে গদি ধরে রাখতে। অপরদিকে প্রাক্তন শাসকদল তথা দেশের প্রধান বিরোধী দল সরকার গড়তে মরিয়া। তারা চাইছে, তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবিতে বিএনপি (BNP)২০১৪ ও ২০১৯-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। কিন্তু শাসকদল আওয়ামি লিগের বক্তব্য, কোনও অনির্বাচিত সরকার তারা গড়তে দেবে না। জনগণের ভোটে যারা সরকারে থাকবে, তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে। এদিকে, এই নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকও সাবধানী। নির্বাচন ঘিরে বিদ্বেষ যাতে না ছড়ায়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষার্ধ্বে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন হওয়ার কথা বাংলাদেশ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা গুজব, বাদ-প্রতিবাদ চলছে। ফেসবুকে যেন ‘গুজব, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ক্ষতিকর কনটেন্ট’ ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই লক্ষ্যে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে ফেসবুকের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেটেড (Meta)।
মেটার আধিকারিকরা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে অপপ্রচার বন্ধ করার বিষয়ে ‘প্রাথমিক আলোচনা’ হয়েছে মেটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘ফেসবুকে যে ধরণের অপপ্রচার হয়, সেগুলো কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা ফেসবুকের নীতি বহির্ভূত কোনও প্রচার হয়ে থাকলে তা ডিলিট, রিমুভ, ব্লক করা হবে।’’ অশোক দেবনাথ জানান, নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনও প্রচারণা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (Election Commissio)মেটা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সেটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেবে।
[আরও পড়ুন: মিলছে না ভিসা, অনলাইনেই ভারতীয় তরুণকে বিয়ে করলেন পাকিস্তানি তরুণী]
মেটা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সব প্ল্যাটফর্মে ‘নির্বাচনের বিশুদ্ধতা’ যেন বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে তারা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। নির্বাচনের স্বকীয়তা যেন বজায় থাকে, সে লক্ষ্যে তারা সরকার, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও এনজিওগুলোর সাথে ‘গঠনমূলক সংলাপ ও নিয়মিত যোগাযোগ’ বজায় রাখে। মেটার ‘গুজব, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ক্ষতিকর কনটেন্ট’ সম্পর্কিত বৈশ্বিক নীতিমালার অংশ এটি। এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে, গুজব মোকাবিলা করতে ও ক্ষতিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেটিও জানায় মেটা। মেটা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন, কোনও নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করা মেটার অন্যতম উদ্দেশ্যগুলোর একটি।
এর জন্য গত কয়েক বছরে কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি তৈরিতে অর্থ বিনিয়োগ করেছে মেটা। তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রস্তুত করছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মেটার সঙ্গে থাকা অনলাইন নিরাপত্তা, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দেওয়া হয়েছে।এছাড়া মানুষের পাশাপাশি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনেও বিনিয়োগ করেছে তারা, যা আগের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে আসন্ন হুমকি অনুমান করতে ও পদক্ষেপ নিতে সক্ষম। মেটা বলছে, নির্বাচনকে ঘিরে ছড়ানো যেসব গুজব মানুষের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, সে ধরনের গুজব তারা সরিয়ে ফেলে। কারা ভোট দিতে পারবেন, প্রদত্ত ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে কি-না বা ভোট দেওয়ার সময় কী নিয়ে যেতে হবে – এই ধরনের তথ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি করা ভুয়া খবরকে মেটা ‘গুজব’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
[আরও পড়ুন: বোনের লিভ ইন সঙ্গীকে নাপসন্দ! যুবকের মাথা থেঁতলে নদীতে ফেলল দাদারা]
একইভাবে, যেসব কনটেন্টের মাধ্যমে হিংসাকে উসকানি দেওয়া হয়, বেআইনি কোনও কাজে প্ররোচনা দেওয়া হয় বা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার আহ্বান জানানো হয়, সে ধরনের কনটেন্টও তারা সরিয়ে দেয়।এসব কনটেন্টের মধ্যে রয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তৈরি করা মিডিয়া রিপোর্ট ও ‘ডিপ ফেক’ নিউজ। এছাড়া নির্বাচনের তারিখ, সময়, স্থান বা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি করা ভুয়া খবরও রয়েছে এই তালিকায়।