নব্যেন্দু হাজরা: মেট্রোর ভাড়াবৃদ্ধির গড় হার মোটামুটি পাঁচ টাকা। এতে যাত্রীর বহর কমবে না? এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে মেট্রো ভবনের অন্দরে। যাত্রীদের একাংশও মনে করছে, এর ফলে পাতালপথে যাত্রী–চাপ কিছুটা হলেও হালকা হবে। কারণ, যাঁরা অনেক দ্রুত এবং স্বচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে বাস ছেড়ে মেট্রোয় সওয়ার হতেন, বাড়তি পাঁচ টাকা খরচ এড়াতে তাঁরা ফের বাসে চড়বেন। তাতে অন্তত পাতালে ভিড়ের চাপে দরজা আটকানোর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও এড়ানো যাবে বলে মনে করছেন মেট্রোর যাত্রীদেরও একাংশ। তাঁরা আশাবাদী, এই ভাড়াবৃদ্ধি শাপে বর হবে। মেট্রোর সফর হবে অনেক আরামদায়ক।
অন্যদিকে, মেট্রো-কর্তাদের টেবিলে টেবিলে চলছে হিসেবের কাটাছেঁড়া। আর সেই অংকেই দেখা যাচ্ছে, ভাড়াবৃদ্ধির জেরে যদি দশ শতাংশ যাত্রীও কমে, তাহলেও মেট্রোর লক্ষ্মীর ভাঁড়ার উপচে পড়বে। আর যাত্রীসংখ্যা যদি একই থাকে, আয় তো আরও বাড়বে। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন কর্তারা। আর এর ফলেই মেট্রোর অপারেটিং রেশিও অনেকটা কমে আসবে। কত আয় বাড়বে? মেট্রোয় হিসেব ধরা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ, এই চার মাসের। তাতে দেখা যাচ্ছে যাত্রীভাড়া থেকে মেট্রোর আয় হয়েছে ৬৬.৬৪ কোটি টাকা। ভাড়াবৃদ্ধির পর যাত্রীসংখ্যা যদি ১০ শতাংশ কমেও যায়, তাতেও নতুন ভাড়ায় আয় দাঁড়াবে ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি টাকা চারমাসে আয় বাড়বে। বছরে তা হবে ৬০ কোটি টাকা। আর তাতেই মেট্রোর অপারেটিং রেশিও কমবে অনেকখানি। এখন মেট্রোয় ১০০ টাকা আয় করতে ২৪৮ টাকা খরচ করতে হয়। ভাড়াবৃদ্ধির পর যাত্রীসংখ্যা একই থাকলে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আয় বাড়বে মেট্রোর। আর বাড়লে তো কথাই নেই। সেই বৃদ্ধি বছরে ১০০ কোটির কাছাকাছি চলে যাবে। কারণ, সমস্ত এসি রেক নামানো হলে সেক্ষেত্রে ট্রিপের সংখ্যাও বাড়বে। স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যাত্রীও। তখন অপারেটিং রেশিও ২০০ টাকার আশপাশে চলে আসবে। তবে মেট্রোর কর্তারা বলছেন, পুরোটাই অংকের হিসেব। কতটা কী হবে, তা আগামী বছরের মার্চ মাসে বোঝা যাবে কিছুটা।
এদিকে মেট্রোর এই ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যাত্রীরাও দ্বিধাবিভক্ত। কেউ বলছেন, এক ধাপে এতটা ভাড়া না বাড়ালেও চলত। আবার অন্য অংশের দাবি, ভাড়া বাড়িয়ে ভালই হয়েছে। ভিড়ের চাপ কমবে নিত্যদিন। তবে সকলেরই বক্তব্য, পরিষেবার দ্রুত উন্নতি প্রয়োজন। সময়ে ট্রেন আসাটাও জরুরি। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, চলতি বছরেই আরও নতুন এসি রেক নামানো হবে। তাছাড়া ডালিয়েন রেক যদি নামে তখন সব নন এসি রেকই বসে যাবে। এসি রেকে ট্রিপও বাড়বে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুনের চেষ্টা, কাঠগড়ায় বিজেপি]
দূরত্বের যে স্ল্যাবে যাত্রীসংখ্যা সবথেকে কম, একমাত্র সেই দূরত্বেই ভাড়া বাড়েনি এবার। মেট্রোসূত্রে খবর, গতবছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সবথেকে বেশি ৪০.৮৬ শতাংশ যাত্রী চড়েছেন পাঁচ থেকে দশ কিলোমিটারের ব্যবধানে। যার ভাড়া ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। ৩১.৯০ শতাংশ যাত্রী চড়েছেন দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটারের ব্যবধানে। সেই ভাড়া ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা হয়েছে। ২০.৬৫ শতাংশ যাত্রী চেপেছেন দশ থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে। যার ভাড়া ১৫ থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে। ৫.১১ শতাংশ যাত্রী পনেরো থেকে কুড়ি কিলোমিটারের মধ্যে চড়তেন। সেই ভাড়াও ১৫ থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে। ১.২১ শতাংশ যাত্রী কুড়ি থেকে পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যে চড়েছেন। যার ভাড়া ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছে। আর পঁচিশ কিলোমিটারের বেশি দূরে যাতায়াত করতেন ০.২৬ শতাংশ যাত্রী। যার ভাড়া একমাত্র বাড়েনি। একই আছে ২৫ টাকা। তাই মেট্রোর লক্ষ্য প্রথম তিন ধাপের যাত্রীসংখ্যা একই রাখা। বরং বাড়ানো। সেক্ষেত্রে এক লাফে ভাড়া বাড়িয়ে অনেকটাই আয় বাড়াতে সক্ষম হবে কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাত্রী বাড়বে, না কিছুটা কমবে, তা আগামী বছরের মার্চ মাসের হিসেবেই বোঝা যাবে। তবে আয় বাড়লে মেট্রোর অপারেশন রেশিও তো কমবেই।”
The post ভাড়াবৃদ্ধিতে যাত্রী সংখ্যা কমলেও বছরে মেট্রোর আয় বাড়বে ৬০ কোটি appeared first on Sangbad Pratidin.