shono
Advertisement

একরাশ আতঙ্ক নিয়ে আপনার অপেক্ষায় পুতুল দ্বীপ!

জীবন আর পরপারের মধ্যে সীমারেখাটা যেমন খুব আবছা, সেরকমই এই পুতুল দ্বীপের কাহিনি। The post একরাশ আতঙ্ক নিয়ে আপনার অপেক্ষায় পুতুল দ্বীপ! appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:04 PM Jul 26, 2016Updated: 04:34 PM Jul 26, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনেকেই বলতে চান, ব্যাপারটা নিছক পাপবোধ ছাড়া আর কিছুই নয়! কিন্তু, একটু ধৈর্য ধরে সবটা জানলে বোঝা যাবে, বড় সহজে কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণ করে ফেলা গেলেও আদতে বাস্তব মোটেও সহজ নয়! জীবন আর পরপারের মধ্যে সীমারেখাটা যেমন খুব আবছা, সেরকমই এই পুতুল দ্বীপের কাহিনি।

Advertisement


মেক্সিকোর পুতুল দ্বীপ। ‘আইল্যান্ড অফ দ্য ডলস’ লোকমুখের নাম। আসল নাম জোচিমিলকো। আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগে যে দ্বীপের জল ঘুরতে শুরু করেছিল জীবন থেকে মৃত্যুর খাতে।
সে বড় সুখের সময় নয়। মেক্সিকোর এই দ্বীপসংলগ্ন খাঁড়িতে ভেসে উঠেছিল এক বালিকার মৃতদেহ। তার কিছু দিন পরে জোচিমিলকো দ্বীপে এসে হাজির হন এক সাধু। জুলিয়ান স্যান্টেনা ব্যারেরা তাঁর নাম। সাধুর দাবি ছিল, মৃতা ওই বালিকার আত্মা তাঁকে টেনে নিয়ে এসেছে এখানে। তিনি ওই বালিকাকে বাঁচাতে পারেননি ঠিকই, তাই এই নিরালা দ্বীপকে বেছে নিয়েছেন প্রায়শ্চিত্তভূমি রূপে।


স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে- সাধুর এই পাপবোধ কেন? ওই মৃতা বালিকাকে তার জীবদ্দশায় কি চিনতেন তিনি?
না! সাধু বলতেন, ওই বালিকা পরপার থেকে ডাক পাঠিয়েছে তাঁকে। স্বপ্নেও দেখা দিয়েছে বহু বার। কিন্তু, তখন ওই সব স্বপ্নের তাৎপর্য তিনি বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারলে তাঁর এই দ্বীপে এসে নিরালাবাসের প্রয়োজন হত না! প্রয়োজন হত না প্রায়শ্চিত্তের!


জুলিয়ান এই দ্বীপে আসার কিছু দিন পরেই ফের এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। একটা পুতুল ভেসে আসে খাঁড়ির জলে। ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল বালিকাটির!


সেই পুতুলকে জল থেকে তুলে আনেন জুলিয়ান। টাঙিয়ে দেন একটা গাছের ডালে। সেখান থেকেই শুরু হয় এই পুতুল দ্বীপের কাহিনি। মাঝে মাঝেই না কি খাঁড়ির জলে ভেসে আসত পুতুল। আর, সেগুলোকে জল থেকে তুলে দ্বীপের নানা জায়গায় টাঙিয়ে দিতে থাকেন জুলিয়ান। এটাই ছিল তাঁর প্রায়শ্চিত্তের অঙ্গ।


শুধু খাঁড়ির জলে ভেসে আসা পুতুলই নয়। জুলিয়ান নিজেও মাঝে মাঝে শহর থেকে পুতুল কিনে আনতেন। এভাবেই দিন যেতে থাকে। আর, ধীরে ধীরে হাজারেরও উপর পুতুলে ভরে যায় দ্বীপ। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। বেঁচে থাকে মানুষের মতোই! তবে, দিনে নয়, রাতের বেলাতেই দেখা যায় এই অলৌকিক ঘটনা।


জুলিয়ান বলতেন, দ্বীপের এই সব পুতুলের মধ্যেই না কি রয়েছে ওই মৃতা বালিকার আত্মা। রাতের বেলায় তাই পুতুলদের শরীর থেকে বালিকার কণ্ঠস্বর শোনা যায়। হঠাৎ হঠাৎ না কি চোখ মেলে তাকায় পুতুলরা। তাদের চোখ দিয়ে জল পড়ে!


সারা জীবন এভাবে এই দ্বীপেই পুতুলদের সঙ্গে কাটিয়ে দেন জুলিয়ান। তাঁর জীবনের সমাপ্তিও আসে বড় অদ্ভুত সমাপতনের পথে। ওই খাঁড়ি বেয়ে, যেখানে মৃত্যু হয়েছিল বালিকাটির। আত্মীয়রা ঠিক যে জায়গায় বালিকার শরীর ভেসে উঠেছিল, যে জায়গায় ভেসে এসেছিল পুতুল, সেখানেই জুলিয়ানের শরীর ভেসে উঠতে দেখেন!


তার পর থেকেই জুলিয়ান আর ওই বালিকার স্মৃতিতে এই পুতুল দ্বীপ উৎসর্গীকৃত। জুলিয়ানের আত্মীয়রা এখন দেখভাল করেন এই দ্বীপের। তাঁরা এই দ্বীপের নাম দিয়েছেন চিনামপাস। বর্তমানে, এই দ্বীপ হয়ে উঠেছে মেক্সিকোর অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র। সারা পৃথিবী থেকে মানুষ এখানে আসেন জুলিয়ান আর ওই মৃতা বালিকার আত্মাকে শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁদের আত্মার শান্তিকামনায় গাছের ডালে পর্যটকরা ঝুলিয়ে দিয়ে যান পুতুল।


তবে, পর্যটনক্ষেত্রে পরিণত হলেও, লোকের কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠলেও চিনামপাস প্রথম দর্শনে অস্বস্তিই জাগায়! সবুজে ঢাকা দু’ পাশ পেরিয়ে, ঘন কচুরিপানা কেটে কেটে ঘণ্টাদুয়েক সুখকর নৌযাত্রার পর আচমকা চমকে উঠতে হয়। যখন দেখা যায়, মৃতদেহের মতো গাছ থেকে ঝুলছে পুতুলের সারি।


অনেক বছর পেরিয়ে এসে অনেক পুতুলই এখন অবক্ষয়ের মুখে। কারও চোখ বেরিয়ে এসেছে, কারও বা খুলে গিয়েছে হাত-পা। উঠে গিয়েছে চুল, ছিঁড়ে গিয়েছে পোশাক!
সেই দৃশ্য চোখে পড়লে সভ্য সমাজের কোনও যুক্তি মাথায় আসে না। বোঝা যায়, জীবন আর মৃত্যু মাঝেমাঝেই নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে চলে আসে পরস্পরের ঘরে।

The post একরাশ আতঙ্ক নিয়ে আপনার অপেক্ষায় পুতুল দ্বীপ! appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement