অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ভিন রাজ্যের কর্মস্থল থেকে ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ছড়াল চাঞ্চল্য। কালনার বাসিন্দা ওই পরিযায়ী শ্রমিকের (Migrant Labourer) পরিবার একমাত্র ছেলেকে খুন করার অভিযোগে সরব। জানা গিয়েছে, মৃতের নাম শুভ দত্ত, বয়স ৩২ বছর। তাঁর বাড়ি কালনা শহরে। মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে ১৬ বছর বয়স থেকে এক সোনার দোকানে কাজ করতেন শুভ। হুগলির পাণ্ডুয়ায় তাঁর বিয়ে হলেও বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। শুভর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। রেলপথে তাঁর মৃত্যু হওয়ায় ঘটনার তদন্তে নেমেছে জিআরপি।
পরিবার সূত্রে খবর, গত শনিবার রাত ৯ টা নাগাদ শুভ হাওড়া-মুম্বই মেল ট্রেনে চড়ে কালনার (Kalna)বাড়িতে ফিরছিলেন। রবিবার দুপুরে ট্রেন থেকেই তাঁর পরিবারকে ভিডিও কল করে জানান, তাঁকে কয়েকজন প্রাণে মারার চেষ্টা (attempt to murder) করছে। শুধু তাই নয়, তাকে ট্রেনের ভিতর ছোটাছুটি করতেও দেখা গিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp)ভয়েস কলে এক বন্ধুকে সে জানায়, “ওরা মনে হয়, আমাকে কিন্তু ট্রেন থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক আছে। আমি বলে দিলাম। আমাকে আর খুঁজে পাবি না। আমার পিছনে লোক ঘুরছে। মা কালীর দিব্যি, মাকে বললাম মা বিশ্বাস করছে না। তোকে বার বার বলছি। ব্লেড, রড, সব নিয়ে যাচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: ডাক্তারদের ‘মিশন লালবাজার’-এ শামিল সোহিনীও, বললেন, ‘এখনও লুকিয়ে অনেক সন্দীপ’]
এর পর শুভকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে ওই ফোন থেকেই সোমবার তাঁর পরিবারকে মোবাইলে ছবি পাঠিয়ে জানানো হয় যে, ছেলে মারা গিয়েছে। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে (Nagpur) রেললাইন থেকে কিছুটা দূরে তাঁর দেহ (Deadbody) পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা শুভর বাবা সুবীর দত্ত কষ্ট সামলে বলেন, “ছেলেকে খুন করা হয়েছে। কারণ ছবিতে দেখা গিয়েছে, ছেলের মাথার পিছনে আঘাত করা হয়েছে। শরীরে ব্লেডের দাগ রয়েছে। শনিবার রাতে ছেলে ট্রেনে ওঠে। সেদিন ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে আমার আর ওর মায়ের কথা হয়। রবিবার সকাল পর্যন্ত ভালোভাবে কথা হলেও হঠাৎ করে ট্রেনের ভিতর থেকেই ভিডিও কলে ছেলে জানায় যে ওকে কেউ মারতে চাইছে। এক বন্ধুকে এই নিয়ে ভয়েস মেসেজও করে যে তাকে কেউ মারতে চাইছে। ওইদিন দুপুরের পর থেকে ছেলের ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়।”
এমন পরিস্থিতিতে ওই পরিবার কালনা জিআরপির (GRP)ও থানার দ্বারস্থ হন। তারাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। যোগাযোগ করা হয় মহারাষ্ট্র পুলিশের সঙ্গে। সোমবার সকালে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যান ওই যুবকের বাবা ও কয়েকজন। জিআরপি, আরপিএফের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। সোমবারই সকাল সাড়ে নটা নাগাদ ছেলে শুভর ফোন থেকে বাবা সুবীর দত্তের ফোনে ফোন আসে। রেলকর্মীর পরিচয় দিয়ে একজন তাঁকে জানান, যে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের পরে একটি স্টেশন এলাকায় রেললাইনের ধারে একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাঁর কাছে এই মোবাইলটি পাওয়া গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ইজরায়েলের হাত নেই! রাইসির কপ্টার দুর্ঘটনার আসল কারণ জানাল ইরান]
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, তাঁদের ছেলেকে খুন (Killing) করা হয়েছে। কালনা জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগপুরের থেকে কিছুটা দূরে ওই যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক, জিআরপির সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারা যায় ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। চলন্ত ট্রেনের ভিতরেই তিনি ছোটাছুটি করছিলেন। অসংলগ্ন আচরণ করছিলেন। তাই প্রাথমিক অনুমান, ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছে জিআরপি।