তিনি সাক্ষাৎকার দিতে চান না চট করে। যতক্ষণ না তাঁর বলার মতো কিছু থাকে। সেই মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) বেঙ্গালুরু থেকে জুম কলে ধরা দিলেন। কেবল অনুরোধ ছিল নতুন ছবি 'সন্তান' মুক্তি পাচ্ছে, তাই কথা প্রসঙ্গে রাজনীতি যেন না আসে। আলাপচারিতায় সুপারস্টার নয়, অকপট ব্যক্তি মিঠুনই ধরা দিলেন। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
প্রথমেই জানতে চাই শরীর কেমন? হাতের কী অবস্থা?
- হাত সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্ট ঠিক আছে এখন। ফিজিও করছি কিন্তু এখনও পুরো ঠিক হতে টোয়েন্টি ফাইভ পার্সেন্ট বাকি আছে।
রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘সন্তান’-এ বাবার চরিত্র করতে রাজি হলেন কেন?
- কারণ, আজকের দিনে আমরা মূল্যবোধ ভুলে গেছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা ভাবে তারাই নাম্বার ওয়ান, মা-বাবা কিছুই নয়। মা-বাবা জাস্ট রয়েছে, তারা যা করছে সেটাই ঠিক। তা কিন্তু নয়। মূল্যবোধ বলে জিনিস আছে, সেটা আমরা হারিয়ে ফেলেছি ক্রমশ। সেই হারানোর জায়গা থেকেই এই গল্প।
বয়স্করা ক্রমশ একা হয়ে যাচ্ছেন, এই সমস্যাটা আপনাকে কতটা ভাবায়?
- এইটা নিয়েই তো ছবির গল্প। একা কেন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাছে মা-বাবা একটা বোঝা হয়ে গেছে। লোকে ভুলে যায়, আজকে তুমি যা হয়েছ, এটাও হতে পারতে না মা-বাবা না থাকলে।
এর আগেও সাম্প্রতিককালে আপনি বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রটা (শরদিন্দু) কোথায় আলাদা?
- এটা আলাদা এই কারণেই যে, মূল্যবোধ যে আছে, আমি দর্শকের সামনে তুলে ধরতে চাই। এই বাবা আলাদা, সে ভালোবাসতে পারে আবার সময় এলে রিভোল্ট-ও করতে পারে। এই বাবা ছেলের জন্য সব যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে কিন্তু একটা সময় আসে সে বিদ্রোহ করে। স্ত্রী বারণ করে কিন্তু শোনে না, ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়। রাজ চক্রবর্তী পরিচালনা করে যেভাবে ক্লাইম্যাক্স অবধি নিয়ে গেছে, দেখার মতো। এই ছবিটা পরিচালনা করা কিন্তু সহজ ছিল না।
ট্রেলার দেখেছি, মনে হয়েছে বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে। আপনি নিজেও তো বাবা। ব্যক্তিগত ভাবে এই চরিত্র করার সময় আপনার পিতৃসত্তা কোনওভাবে প্রভাবিত করেছে?
- না করেনি। কারণ, আমি আমার ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই মূল্যবোধ কী শিখিয়ে আসছি। এখনও অবধি ভগবানের দয়ায় সেই দিনটা আসেনি। আমরা সবাই একসঙ্গে আলোচনা করি কিছু করার আগে বা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। ভুলও হয়েছে, ঠিকও হয়েছে। দ্যাটস অলরাইট। কিন্তু এমন কোনও সময় আসেনি যে আমি ভাবতে বসেছি এই ছেলেটা হয়তো মূল্যবোধ ভুলে যাবে। বা ভাববে মিঠুন চক্রবর্তী ইজ নোবডি, পিঙ্কি চক্রবর্তী (স্ত্রী যোগিতা বালি) ইজ নোবডি, আই অ্যাম অল ইন অল– এখনও কেউ এরকম মনোভাব দেখায়নি। ভগবানের কাছে চাই যেন সেই দিনটা না আসে।
মিমো, নমশি আপনাকে আগলে রাখেন তার মানে?
- সবাই আগলে রাখে। আমার মেজ ছেলে (উষ্মে) যে আমেরিকায় থাকে, গ্রিন কার্ড হোল্ডার, আমেরিকান-ই হয়ে গেছে (হাসি), সেও একইরকম। তবে আমার মেয়ে (দিশানী) সব থেকে বেশি বকে আমাকে, আর ওই সবচেয়ে প্রোটেক্টিভ।
ট্রেলার দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঋত্বিক চক্রবর্তী আর আপনার দ্বৈরথ একেবারে। কতটা উপভোগ্য?
- আমি বলব প্রত্যেকটা সিনে উপভোগ করবে। ঋত্বিকের সঙ্গে প্রতেকটা সিন-ই ইনটেন্স। ইনফ্যাক্ট ছবির প্রত্যেকটা সিন হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। দর্শক ভাববে, এটা না হলেও ভালো হয়। কিন্তু হয়েছে। যার ফলে ওই যন্ত্রণা-দুঃখ। বাবা হয়ে ছেলের জন্য কতটা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে দেখার। একসময় দুঃখ সইতে সইতে ছেলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে।
অভিনেতা ঋত্বিককে কেমন লাগল?
- হি ইজ ফ্যানটাস্টিক। হি ইজ এফর্টলেস অ্যাক্টর। এত সুন্দরভাবে কাজ করেছে, না দেখলে বুঝতে পারবে না।
এই প্রথম রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করলেন। সেই অভিজ্ঞতা কেমন?
- না, রাজ ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এ আমাকে ডিরেক্ট করেছে আগে।
ঠিকই, ওটা রিয়্যালিটি শো, মিস করছিলাম। তবে সিনেমায় তো এই প্রথম...
- ডিরেক্টর হিসেবে রাজ খুব সহজ, কোনও ইরিটেশন নেই। সেটে আসে, কথা বলে। এসে বলে, ‘দাদা আমার এটা চাই।’ এইটুকুই বলে ও। আমার ওপর ওর এত বিশ্বাস, জানে এইটুকু বলে দিলেই দাদা করে দেবে, ঠিক ও যেটা চাইছে। আমার মনে হয়, আমি ওর কনফিডেন্স অবধি নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছি।
এই ছবিতে এমন কোনও দৃশ্য আছে, যেটা করতে গিয়ে আপনি কেঁদে ফেলেছিলেন বা খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন?
- আমি কোনও সিনে ক্যারেড অ্যাওয়ে হয়ে যাই না। সিন হওয়ার পরেও কেঁদে চলেছে, আমি এমন না। সুইচ অন আর সুইচ অফ করতে পারি। খুব ড্রামাটিক সিনেও শট দেওয়া হলে সুইচ অফ করে নিতে পারি।
‘কাবুলিওয়ালা’র রহমত, ‘প্রজাপতি’-র গৌর বা এই ‘সন্তান’-এর শরদিন্দু, প্রত্যেকের একটা ইমোশনাল জার্নি আছে। এই চরিত্রটাকে অ্যাপ্রোচ করলেন কীভাবে?
- আমার বাবার (বসন্তকুমার চক্রবর্তী) রোল করেছি আমি এখানে। ঠিক আমার বাবা যেমন ছিলেন, পর্দায় সেটা ফুটিয়ে তুলেছি। একটা সময় বাবাকে ছেড়ে দিয়ে শরদিন্দুকে নিজের মতো করে সেই রিভোল্টের জায়গায় নিয়ে গিয়েছি।
অর্থাৎ ছবিটা করতে গিয়ে আপনার বাবার স্মৃতি ঘুরেফিরে এসেছে।
- হ্যাঁ। এমনকী, আমার চরিত্র যখন সিদ্ধান্ত নেয় যে, কেস করবে আমার বাবার কথা খুব মনে পড়েছে। কারণ, আমার বাবা বলেছিল, ‘‘ওকে বাড়িতে ঢুকতে দিও না, খেতেও দিও না। ওকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। আমি মনে করব আমার ছেলে বলে কোনও সন্তান নেই।’’ কারণ, আমি যে রাস্তায় চলেছিলাম সেখানে তেমন কেউ ছিল না, যে আমি আবার ফিরে আসব। না মা, না বাবা কেউই ভাবত না। সে আজকে বেরিয়ে গেছে, কখন আসবে কি আসবে না কেউ জানে না। যার ফলে একদিন বাবা হ্যাড টু টেক আ কল, যে ওকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। সেই যে রিভোল্ট করলেন...। ফলে স্মৃতি থেকে আমি বাবাকে ছবির অনেক জায়গায় এনেছি।
২০ তারিখ ‘সন্তান’ আসছে। বেশ কটা বড় ছবি আসছে একই সময়ে। দেবের ‘খাদান’-ও আসবে একই সময়ে। আবার আলোচনায় চলে আসবে দেব আর আপনার যুদ্ধ। কী বলবেন?
- এগুলো বাজে ব্যাপার। আগেও চলত অমিতাভের বই আসছে, মিঠুনের বই আসছে। যে ছবিটা ভালো সেটাই চলবে। সে দেব, আমি বা অন্য কারও ছবি হোক। দেবের ফিল্ম নিশ্চয়ই খুব বড় ফিল্ম, হি ইজ আ বিগ স্টার। আমি তার মধ্যে একটা ছোট্ট স্টার। ট্রাই করব আমার ফিল্মটা যেন লোকের পছন্দ হয় (হাসি)।
এ তো আপনার বিনয়। শুনেছি আগামী দিনে আপনি দেবের সঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করতে চলেছেন?
- ইয়েস, করছি। আমাদের ‘প্রজাপতি’র পর। অভিজিৎ সেনের পরিচালনায় আবার। আর পথিকৃৎ বসুর পরিচালনায় কিছুদিন আগে কাজ করলাম।
সামনে আর কী কাজ?
- এই তো অভিজিতের সঙ্গে ‘প্রজাপতি টু’ করব। আর ক্যামেলিয়ার একটা ছবিতে সাইন করেছি, কিন্তু এখনও গল্পটা ফাইনালি হয়নি।
অনেকদিন আপনাকে হিন্দি ছবিতে পাওয়া যায়নি। ইচ্ছে করে না, না কি?
- কী হয় জানো তো, যখন যেখানে ফিল্ম চলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পরের ফিল্মের প্রোডিউসার এসে যায়। হিন্দিও করছি। ‘বাপ’ করছি, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দিল্লি ফাইল্স’ করছি। আর একটা তেলুগু ফিল্ম করছি প্রভাসের সঙ্গে। সেগুলো সব আসবে একটা একটা করে। তবে একটুখানি খুঁতখুঁতে হয়ে গেছি, কাতুকুতু না দিলে আর করব না (হাসি)। ভালো ছবি না হলে করব না।