স্টাফ রিপোর্টার: এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এবার স্পষ্টভাবে রাজনীতি থেকে নির্বাসন নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত (Silbhadra Dutta)। রবিবার বারাকপুর গার্লস স্কুল সংলগ্ন একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে বিধায়ক তাঁর নিজের উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেন। সেখানেই কর্মীদের জানান, তৃণমূলের হয়ে আর তিনি ভোটে দাঁড়াবেন না। স্বাভাবিকভাবেই শীলভদ্রের এহেন মন্তব্যে দলবদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে সে জল্পনায় জল ঢেলে সাংবাদিক বৈঠক করে শীলভদ্রবাবু রাতেই জানান, তৃণমূলের সাধারণ কর্মী হিসেবে থাকবেন তিনি।
দিন কয়েক আগেই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। এবার সেই একইরকম সুর শোনা গেল শীলভদ্র দত্তের গলায়। তার বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এদিন। বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে শীলভদ্র বলেন, “আমি নীচ থেকে রাজনীতি করতে করতে উপরে উঠে এসেছি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে এসেছি। হঠাৎ করে কারও সন্তান, ভাই, শালা হিসেবে রাজনীতিতে আসিনি। কোনও অর্থনৈতিক দুর্নীতিতেও জড়াইনি। দলের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কিছু প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছিল। দলের নেতৃত্বকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি। তাই আর ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে দলের সাধারণ কর্মী হিসেবে থাকতে পারি।”
[আরও পড়ুন: খুন করে ফের বিজেপি কর্মীর দেহ ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, প্রতিবাদে সোমবার কল্যাণী বন্ধ]
দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর টিমের বিরুদ্ধেও সুর চড়ান শীলভদ্র বাবু। তাঁর কথায়, “বাংলায় রাজনীতি ডিজিটাল পথে হয় না। বাংলায় রাজনীতি হয় আবেগ দিয়ে।” তিনি আরও বলেন, “একটি বাজারি সংস্থা পয়সা নিয়ে ভিন রাজ্য থেকে এসে ভোটের কাজ করছে। তাঁরা এসে আমাকে রাজনীতি নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে। আমার দুর্ভাগ্য বাংলায় দীর্ঘ বছর ধরে রাজনীতি করার পর ওই সংস্থার একটি ছেলে এসে আমাকে বলছে ভোট নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ওটা আমরা করবো।” এর আগেও প্রকাশ্যে না হলেও ঘনিষ্ঠ মহলের কাছে ক্ষোভ উগরে দিতে শোনা গিয়েছিল শীলভদ্রবাবুকে। আগেও তিনি বলেছিলেন, তাঁকে অপমান করা হচ্ছে। এদিন বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “সম্মানহানি করে আর রাজনীতি করতে চাই না। তাই আমার এই সিদ্ধান্ত।” তাঁর এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দলকে কিছু জানিয়েছেন কিনা তা জানতে চাওয়া হলে শীলভদ্রবাবু বলেন, “লিখিতভাবে এখনও কিছু জানাইনি। দল পদত্যাগ করতে বললে সঙ্গে সঙ্গে করব। আর যদি না বলে তাহলে আগামী মে মাস পর্যন্ত বিধায়ক থাকব।” তবে বিধায়ক না থাকলেও বারাকপুর ও টিটাগড়ের মানুষের পাশে তিনি একইভাবে থাকবেন বলে দাবি করেছেন শীলভদ্রবাবু। তবে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে শেষে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন শীলভদ্র। একটি প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “আমার কাছে সব ফুলই ভাল। ফুল সুন্দর হয়, কখনও কুৎসিত হয়না।” তবে কি তিনি পদ্মফুলে আকৃষ্ট হলেন? মুচকি হাসি ঝুলিয়ে নীরব থেকে রহস্য বাড়িয়েছেন তিনি। বিধায়কের মন্তব্য প্রসঙ্গে সৌগত রায় বলেন, “ও অসুস্থ, তাই রাজনীতি থেকে একটু অব্যাহতি চায়। তবে এটাই কারণ নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা পরিষ্কার করে না বললে বোঝা যাবে না। রাজনীতিতে স্পষ্ট কথা বলতে হয়।”