স্টাফ রিপোর্টার: শুক্রবার থেকে তাণ্ডব! একের পর এক পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের। আরপিএফের মেমো চালাচালি। স্টেশন মাস্টারের চিঠি বন বিভাগের কর্তাদের। তবুও ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। কখনও নিত্যযাত্রীদের আঁচড়ে-কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল, কখনও বা কারও হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিয়ে সোজা লাফ মেরে দে ছুট। কেউ আবার অতিরিক্ত উৎসাহের বশে এগিয়ে গিয়ে আলাপ জমাতে গিয়ে খেয়ে গিয়েছে চড়-থাপ্পড়ও। পবনপুত্রের এমন তাণ্ডবে কার্যত নাজেহাল অবস্থা রেলের। বনদফতরে খবর দিয়েও মেলেনি রেহাই। চালাক হনুমান একেবারে বলে বলে গোল দিয়েছে বনকর্তাদের। কখনও বন দফতরের লোকজন আসার আগেই আপ ট্রেন ধরে পরের স্টেশনে নেমে সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছে। বনকর্মীরা সেখানে পৌঁছনোর পর আবিষ্কার করেন, ততক্ষণে ডাউন ট্রেন ধরে স্টেশন চত্বর ছেড়ে কেটে পড়েছে হনু-বাবাজি। যেন লুকোচুরি খেলা। অবশেষে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাকে কাবু করেন বনকর্মীরা। কার্যত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে রেলের।
ঘটনাটি পূর্বরেলের নৈহাটি স্টেশনের। স্টেশন চত্বরেই দাপিয়ে বেড়াত হনুমানটি। তার দাপটে তটস্থ হয়ে থাকতেন যাত্রীরা। তার কামড়ে ইতিমধ্যেই আহত হয়েছেন বেশ কিছু যাত্রী। শনিবার হনুমানের কামড়ে নৈহাটি স্টেশনে গুরুতরভাবে জখম হন হালিশহরের সরস্বতী হরি নামের এক প্রৌঢ়া। কয়েক দিন ধরে তাণ্ডব চালাতে বারবার স্টেশনে এসে পড়ছিল হনুমানটি। অত্যুৎসাহী অনেক যাত্রী ‘জয় বজরংবলি’ ধ্বনি দিয়ে কলা এগিয়ে দিতে গিয়েও চড়-থাপ্পড় খেয়েছেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বন দফতরের লোকজন এলেও তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। হনুমানের দাপট বাড়তে থাকায় আতঙ্ক ক্রমশ ছড়াতে থাকে। যাত্রীদের ছোটাছুটিতে আতঙ্ক বাড়ে রেল কর্মীদের মধ্যে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়।
[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার কবলে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কনভয়ে ধাক্কা পণ্যবোঝাই ট্রাকের, আটক চালক]
সোমবার সকালে ফের বন দফতরকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে রেল। কিন্তু বনকর্মীরা আসার আগেই আপ ট্রেন ধরে হালিশহর স্টেশনে নেমে সেখানেও তাণ্ডব শুরু করে হনুমানটি। কামড়ে জখম করে ট্রেনযাত্রী বীজপুরের বিলাল মোল্লাকে। খবর পেয়ে বন দফতরের কর্মীরা সেদিকে রওনা হতেই ফের ডাউন ট্রেন ধরে নৈহাটিতে ফিরে আসে হনুমানটি। সেখানে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় কখনও ফুট ওভারব্রিজে তো কখনও সিটের উপরে উঠে বসে থাকে সে। তেষ্টা পেলে কল থেকে গিয়ে জলও খায়। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছন বনকর্মীরা। সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎ ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা হয় হনুমানকে। তারপর সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাকপুর রেঞ্জের বন দফতরে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন যাত্রীরা।