সুমিত বিশ্বাস ও অমিত সিং দেও, পুরুলিয়া ও মানবাজার: হনুমানের হনুগিরি-ই বটে! পুরুলিয়ার (Purulia) কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলের ওই বিটের উদলবনি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে একের পর ছাগল উধাও হয়ে যাচ্ছে। এমনকী ছাগল খুবলে খাওয়ার চিহ্নও মিলেছে। পায়ের ছাপ ৭ সেন্টিমিটার মেলায় উদ্বিগ্ন বনদপ্তর তড়িঘড়ি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায়। যাতে পরপর ছাগল উধাও হওয়ার রহস্যভেদ করা যায়। কিন্তু সেই ট্র্যাপ ক্যামেরা যে হনুমান খুলে দিয়ে তা ছুঁড়ে ফেলে দেবে, তা কে জানত? তাই দামি ওই ক্যামেরাগুলি বাধ্য হয়ে রবিবার খুলে নিয়ে এসেছে বনদপ্তর। ফলে উদলবনির জঙ্গলে কি ছাগল সাবাড় করছে কোনও বন্যপ্রাণীই? সেই উত্তর অনুসন্ধানের কাজ থমকে গেল বান্দোয়ান বনাঞ্চলে। হনুমানের (Monkey) এমন দাদাগিরিতে তাজ্জব বনে গিয়েছে বনকর্মী থেকে আধিকারিক, সকলেই।
বনাধিকারিকরা বলছেন, হনুমানকে জঙ্গলের ‘ওয়াচার’ বলা হয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির (National Geographic) মত চ্যানেলগুলিতে যা দেখা যায়, তেমনই। তাহলে চেনা সবুজ ঘন জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরার অচেনা জিনিস দেখেই কি হনুমানের মত বন্যপ্রাণের এহেন আচরণ? নাকি সমতল থেকে তিন ফুট উঁচুতে একটি জিওল গাছে এক ধরনের বেল্টের সাহায্যে বাঁধা ট্র্যাপ ক্যামেরা (Trap Camera) থেকে কি কোন ফ্ল্যাশ হয়েছিল? যা দেখে বিপদ মনে করে গাছের সঙ্গে বেঁধে থাকা ওই ক্যামেরা খুলে দিয়ে ১০ মিটার দূরে ছুঁড়ে দেয় ওই হনুমান? কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হনুমান ভীষণ বুদ্ধিমান হয়। জঙ্গলে ওই ট্র্যাপ ক্যামেরা তার নিশ্চয় অচেনা লেগেছে। সেই কারণেই তার অমন আচরণ হতে পারে। নতুবা ক্যামেরা থেকে কোনও ফ্ল্যাশ হয়েছে। তাই ওই কাজ করে থাকতে পারে।”
[আরও পড়ুন: হাতের লেখায় লুকিয়ে বিপদ! আত্মহত্যাপ্রবণতা টের পেতেই কাউন্সেলিং, প্রাণ বেঁচেছে ৪৬ জনের]
সম্প্রতি ওই উদলবনি গ্রামের পাশের জঙ্গলে যেখানে ছাগলের খুবলে খাওয়া দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল সেখানে দুটি এবং ওই জঙ্গল লাগোয়া জলাশয়ের পাশে আরও দুটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায় বান্দোয়ানের বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছুদিন পরে তা খোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল বনদপ্তর। কিন্তু তার আগেই গাছে বাঁধা ওই ক্যামেরা হনুমান খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ায় বিপাকে বনদপ্তর। ঘন জঙ্গলে হনুমান মূলত গাছের মগডালে বসে থাকে। তার কারণ চিতার খাদ্য তারা। যেখানে হনুমান থাকে তার নিচে নিরাপদ মনে করে হরিনের দল। তবে এই জঙ্গলে নেকড়ে না চিতা একের পর এক ছাগল ধরে নিয়ে যাচ্ছে, তা এখনও বুঝতে পারল না বনদপ্তর।
[আরও পড়ুন: বিলকিসের ধর্ষকদের সংবর্ধনা দিয়েছে VHP! শাজিয়া ইলমির কথায় রেগে আগুন সংঘ পরিবার]
এই ধরনের ক্যামেরাগুলির পাশ দিয়ে চলে গেলে স্থির চিত্র (Still Photos) বা ভিডিও হয়ে থাকে। তবে ওই হনুমান গাছের সঙ্গে বাঁধা ক্যামেরা খুলে দিয়ে তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেও সেই ছবি কিন্তু আসেনি। জঙ্গলের ওই জিওল গাছে যেভাবে আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে, তা থেকেই বনদপ্তর (Forest Department) নিশ্চিত এটা হনুমানের কাণ্ড। ওই ক্যামেরার নজরদারি করা যৌথ বন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এই কথা বলছেন। উদলবনি লাগোয়া রাইকা ও ভারারি পাহাড়ে প্রচুর হনুমান রয়েছে। তাদের উৎপাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ওই এলাকার মানুষজনের। পুরুলিয়া বনবিভাগের কোটশিলা বনাঞ্চলে ট্র্যাপ ক্যামেরায় যে চিতার দেখা মিলেছিল, সেখানে দেখা গিয়েছিল ওই বন্যপ্রাণ জিভ দিয়ে চাটছে ক্যামেরা। কিন্তু এইভাবে ক্যামেরা খুলে দেবে হনুমান! তা নিয়ে হাসি-মশকরাও চলছে ওই বনাঞ্চলে। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও বলছিলেন, “বক্সা টাইগার রিজার্ভ-এ আমি এডিএফও থাকাকালীন দেখেছিলাম হাতি ট্র্যাপ ক্যামেরা খুলে দিয়েছিল।” আসলে হনুমান হাতির মতো বন্যপ্রাণ ভীষণই সতর্ক। বিপদ বুঝলে টের পেয়ে যায়।