shono
Advertisement

Breaking News

সবুরে মেওয়া ফলল শবরের দ্বিতীয় অভিযানে

শহরের এক অভিজাত পরিবারে খুন৷ রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গেলেন নন্দিনী (পায়েল সরকার)৷ বন্ধুকে বাঁচাতে পাল্টা গুলি চালান শিবাঙ্গী (জয়া এহসান)৷ কিন্তু ডাকাতের গুলিতে তিনিও মারাত্মক জখম হয়ে কোমায়৷ ভোররাতে শিবাঙ্গির স্বামী বিষাণ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) বাড়ি ফিরে উদ্ধার করেন তাঁকে৷ তদন্তে এসে পুলিশ জানিয়ে যায়, নিছকই ডাকাতির ঘটনা৷ সন্তুষ্ট হতে পারেন না এক সাব […] The post সবুরে মেওয়া ফলল শবরের দ্বিতীয় অভিযানে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:55 AM Aug 13, 2016Updated: 07:52 PM Aug 12, 2016

শহরের এক অভিজাত পরিবারে খুন৷ রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গেলেন নন্দিনী (পায়েল সরকার)৷ বন্ধুকে বাঁচাতে পাল্টা গুলি চালান শিবাঙ্গী (জয়া এহসান)৷ কিন্তু ডাকাতের গুলিতে তিনিও মারাত্মক জখম হয়ে কোমায়৷ ভোররাতে শিবাঙ্গির স্বামী বিষাণ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) বাড়ি ফিরে উদ্ধার করেন তাঁকে৷ তদন্তে এসে পুলিশ জানিয়ে যায়, নিছকই ডাকাতির ঘটনা৷ সন্তুষ্ট হতে পারেন না এক সাব ইনস্পেক্টর (গৌরব চক্রবর্তী)৷ খবর যায় শবর দাশগুপ্তর (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) কাছে৷ স্রেফ ডাকাতি নাকি সুপারি দিয়ে খুন? কেন এক মহিলা রিভলবার নিয়ে শুয়েছিলেন রাতে? খটকা একাধিক৷ আর রহস্যের কুয়াশা কাটাতে পর্দায় শুরু শবরের দ্বিতীয় অভিযান...

Advertisement

সরোজ দরবার: ফেলুদা-ব্যোমকেশ অধ্যুষিত টলিপাড়ার গোয়েন্দা সাম্রাজ্যে খানিকটা স্বাদবদলের হাওয়া এনেছিল শবর দাশগুপ্ত৷ অপরাধ ও গোয়েন্দাদের ভিতর সম্পর্কের চেনা ছকের ভিতরেই দর্শক পেয়েছিল মুক্তির হাওয়া৷ আর তাই পর্দায় শবরে দ্বিতীয় অভিযানে ছিল বাড়তি আগ্রহ৷ এক বছরের একটু পরেই মুক্তি পেল পর্দায়  শবরের দ্বিতীয় অভিযান ‘ঈগলের চোখ’৷  তা কেমন হল শবরের শিকার ধরার নতুন কাহিনী?

শবরের প্রথম অভিযান ‘এবার শবর’ ঠিক যেখানে শেষ হয়েছিল, শবরের জন্য যে মেজাজ ও আগ্রহ জাগিয়ে রেখেছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু হল শবরের দ্বিতীয় সিনে-অভিযান৷ এবার শবর অপরাধী ধরতে ধরতে ক্লান্ত৷ অপরাধীর মধ্যে কখনও নিজেরই ছায়া দেখছেন৷ মনোবিদ মধুরিমা সেন জানালেন, মানুষের মনে অহরহ চলছে কনশাস আর সাবকনশাসের খেলা৷ কখনও চেতন এগোচ্ছে, তো কখনও অবচেতন তাকে ঢেকে দিচ্ছে৷ আর এর দ্বন্দ্বেই নামছে ক্লান্তি৷ যে ক্লান্তি গ্রাস করেছে শবরকেও, কিন্তু ছুটি নেওয়ার মতো ফুরসত শবরের কোথায়! তাঁকে ছুটতে হয় নন্দিনী সেনের হত্যা রহস্যের সমাধানে৷ আর কী আশ্চর্য, এখানে গিয়েও তিনি সন্ধান পান এমন এক মানুষের, যার অবচেতন মন তাকে প্রায় ‘জন্তু’ করে তুলেছে৷ আদতে ভদ্রলোক বিষাণ রায়, মাঝেমধ্যে কী করে যেন বদলে যায়

৷ সম্পর্ক, ঘর, সংসার কোনওকিছুতেই আর হুঁশ থাকে না তার৷ এমনকী ‘ভাড়াটে মেয়ে’ নিয়ে হোটেলের বিছানাতেও  শান্তি  পায় না সে৷ নিজেই বলে, তার অনুভূতিরা সব মরে গিয়েছে, শরীরটা যন্ত্রের মতো হয়ে গিয়েছে৷ অথচ বহু নারীই তার আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারে না৷ তিনি ‘উইমেনাইজার’ নন, অথচ মেয়েদের এই অদ্ভুত টানে আর নিজের মানসিক দ্বন্দ্বে জেরবার৷ স্ত্রী শিবাঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নেই, ডিভোর্স হয় হয়৷ উপরন্তু বাড়িতে থাকে স্ত্রী’র বান্ধবী নন্দিনী, যিনি আবার বিষাণের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে মরিয়া৷ কী একটা গোপন জিনিস বলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে চলে বিষাণকে৷ ঘরে আছে টিন এজ ‘কাজের মেয়ে’ জাহ্নবী, যাকে শিবাঙ্গী নিজের মেয়ের মতো স্নেহে পালন করে৷ সেও কি গোপনে টান অনুভব করে বিষাণের প্রতি? এই দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পেতে বিষাণই খুন করাল নন্দিনীকে, এমনকী তাঁর স্ত্রীকেও…এমনি বললাম…শবর দাশগুপ্তর স্টাইলে বললে এমনই বলতে হয়৷ কেননা এ সব রহস্যের জট তো পর্দায় খুলবে শবর স্বয়ং৷

অপরাধ ও অপরাধী ধরার গল্পগাছা ছাপিয়ে শবরের কাহিনীতে রক্ত-মাংসের মানুষের টানাপোড়েন, প্রেম-সম্পর্কের দ্বান্দ্বিক নকশা এনেছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়৷ এখানেই শবর স্বতন্ত্র৷ এই স্বতন্ত্রতা শবরের দ্বিতীয় অভিযান ‘ঈগলের চোখ’-এও অবিকল রাখতে

পেরেছেন পরিচালক৷ বলা বাহুল্য শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ছাড়া এ কাজ সম্ভব হত না৷ ভাবলেশহীন কঠোর গোয়েন্দা হওয়ায় তাঁর মুখের রেখায় অনুভূতিরা ছায়া ফেলে না৷ আবার শবর তো গোয়েন্দা হয়েও মানবিক৷ এক চরিত্রের ভিতর এ দুই আপাত বৈপরীত্যে যেন কোনও অন্ত্যমিল নেই৷ আর সেখানেই শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মতো তুখোড় অভিনেতা পারেন স্রেফ দৃষ্টির শূন্যতায় দিয়ে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স রচনা করতে পারেন৷ পারেন নীরবতা দিয়েও সজলতার আখর রচনা করতে৷ এ ছবিতে তাঁর সেই মুনশিয়ানার সাক্ষী থাকবেন দর্শক৷

শবরের সহকারী হয়ে নন্দর ভূমিকায় যথাযথ শুভ্রজিৎ দত্ত৷ বিশেষত বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা নন্দর ভুল ইংরেজি বলা নিয়ে প্রথম শবরে যে নির্মল হাসির খোরাক পেয়েছিলেন দর্শক, দ্বিতীয় ছবিতেও সেই ছোঁয়া রেখেছেন পরিচালক৷ শুভ্রজিৎ জানতেন তাঁর থেকে প্রত্যাশা কী, তিনি তা প্রত্যাশিতভাবেই পূরণ করেছেন৷ এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য৷ থিয়েটারের দর্শক তাঁকে চিনলেও সিনেমার দর্শক তাঁকে তেমন দেখেনি৷ দুরন্ত এই অভিনেতাকে চমৎকার ব্যবহার করেছেন পরিচালক৷ বিশেষত বিষাণের চরিত্রে, যেখানে প্রতি মুহূর্তে কনশাস-সাবকনশাসের খেলায় কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি, সেখানে কখনও বাচিক অভিনয়ে ও কখনও অভিব্যক্তির পরিমিতিবোধে মাত করেছেন তরুণ এই অভিনেতা৷

আর যাঁর কথা উল্লেখ না করলে এ শবর অর্থহীন হয়ে পড়বে তিনি জয়া এহসান৷ তিনি যে তুখোড় অভিনেত্রী তা নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না৷ 

এ ছবির চূড়ান্ত মুহূর্তে ক্যামেরা যখন তাঁর চোখে চোখ রাখল, তিনিও দেখালেন তাঁর দৃষ্টি কীভাবে অসহয়তা থেকে অসন্তোষ থেকে প্রতিশোধ থেকে ভেঙে পড়ার অনুভূতিতে বদলে বদলে যেতে পারে৷ নিঃসন্দেহে বাঙালি দর্শকের কাছে এ এক সেরা পাওনা৷

সৌমিক হালদারের ক্যামেরা প্রায় নিরুচ্চারে যেভাবে শহরের ছবি আঁকে, যেভাবে শবরের অপরাধী পিছনের ধাওয়া করার দৃশ্যকে গতিময় করে তোলে, তা নিজের অজান্তেই মন ছুঁয়ে যায় দর্শকের৷ ঠিক তেমনই বিক্রম ঘোষের নেপথ্য সংগীত৷ যে গল্পে অপরাধ, মনস্তত্ত্ব, চেতন-অবচেতনের খেলায় অনভূতির বদলেছে পরতে পরতে সেখানে রিদমের খেলায় মগ্ন হয়েছেন তিনিও৷ দর্শক সচেতনভাবে খেয়াল করেন না হয়তো, কিন্তু টগবগে তালের খেলায় মজে যান অজান্তেই৷ আর সেই মগ্নতার ভিতরই প্রাণবন্ত শবরের ধাওয়া করার দৃশ্যেরা৷

তাহলে এ ‘ঈগলের চোখ’-এ সুপারস্টার কে? প্রথমত পরিচালক অরিন্দম শীল৷ প্রত্যাশার চাপ ছিল তাঁর উপর৷ তা সামলে যে স্মার্টনেসে তিনি শবরের কাহিনীকে পর্দায় ফুটিযে তুলেছেন তার জন্য নিঃসন্দেহে কুর্নিশ প্রাপ্য তাঁর৷ দ্বিতীয়ত লেখক স্বয়ং৷ কনশাস-সাবকনশাসের খেলায় তিনি জীবনের মুখ আর মুখোশকে মুখোমুখি বসাতে চেয়েছিলেন তিনি৷ অপরাধী ধরার থেকেও শবরের সিদ্ধান্তে ধরা থাকল জীবনের সেই মর্মটুকু৷ এ গোয়েন্দাকাহিনী হয়তো দর্শককেও চিনিয়ে দেবে তাঁর অপর সত্তাকে, চিনিয়ে দেবে অবচেতনের অন্য মানুষটিকে৷ অনেক উপর থেকে, যাকে বলে ‘বার্ডস আই ভিউ’, অর্থাৎ ঈগলের চোখে দেখলে ভাল-মন্দের দ্বন্দমূলক জীবনের পরিধি প্রসারিত হয়ে এক বড় প্রেক্ষাপটের সামনে এসে পড়ে৷ এ কাহিনীতে সেই সীমান্তেই পাঠককে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন লেখক৷  পরিচালক নিপুণভাবে সে বার্তাটুকু তুলে রাখতে পেরেছেন তাঁর সাজানো ফ্রেমের পরতে পরতে৷ সাহিত্য-সিনেমার যুগলবন্দিতে যে প্রাপ্তি ছিল বাঙালি দর্শকের ঐতিহ্য, উত্তরাধিকারে তরুণ প্রজন্মের দর্শককেও সে অনুভবই তুলে দিতে পারলেন অরিন্দম শীল৷ নাকি শবর দাশগুপ্ত? কে জানে বাংলা সিনেমার মনে কে কনশাস আর কে সাব কনশাস! তবে যে যাই হোক, লাভ আখেরে দর্শকেরই৷

………………………………………………………………………….

ঈগলের চোখ

পরিচালনা-অরিন্দম শীল

অভিনয়- শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শুভ্রজ্যোতি দত্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জয়া এহসান প্রমুখ

নেপথ্য সঙ্গীত- বিক্রম ঘোষ   

রেটিং-৪/৫

 

The post সবুরে মেওয়া ফলল শবরের দ্বিতীয় অভিযানে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement