সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখন বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এতদিন দেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি ইউনুস। কয়েকদিন আগেই পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের মুখ্য কমিশনার-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। প্রশ্ন ওঠে, কবে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন? এবার প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস জানালেন, রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা তিনি জানাননি।
ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। আপাতত তিনি রয়েছেন ভারতে। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে এই সরকারের প্রধান করা হয় ইউনুসকে। চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়েছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, এই বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকেই আইএমএফের (আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার) ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউনুস। নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলে আলোচনায় তিনি জানান, "নতুন সরকার গঠনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার পাশাপাশি ভোটার তালিকা তৈরি হলেই নির্বাচনের তারিখ জানানো হবে।"
প্রসঙ্গত, অনেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের উপর আস্থা রেখেছেন। চাইছেন অন্তর্বর্তী সরকারই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকুক। আর এই পরিস্থিতিতে দ্রুত ভোট করানোর দাবি তুলেছে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের আগে দেশের সংস্কারের উপরেই জোর দিচ্ছে ইউনুস সরকার। তবে কতদিনে সেই সংস্কার সম্পন্ন হবে তা নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি। এনিয়ে কয়েকদিন আগে বিএনপি জানায়, প্রয়োজনীয় সংস্কারে তারা সরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছে একাধিক দল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগও জানিয়েছে যে, দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সরকার গঠন হওয়া উচিত।
এর পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন ইউনুস। সেখানে দলগুলো বিভিন্ন দাবি তুললেও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া দিন তিনেক আগেই ভোট নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। জানিয়েছিলেন, আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে অন্তবর্তী সরকার। তাদের এই কাজে সমর্থন করবে সেনা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা বয়কট করে বিএনপি, জামাতের মতো সমমনা দলগুলো। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন শেখ হাসিনা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছিল আওয়ামি লিগ। কিন্তু ৭ মাসের মধ্যেই ছন্দপতন ঘটে। ব্যাপক জনরোষের মুখে গদি হারান মুজিবকন্যা। এখন হাসিনার অবর্তমানে ক্ষমতায় ফেরার লড়াইয়ে শামিল বিএনপি। ময়দানে রয়েছে জামাত, হেফাজতে ইসলামির মতো মৌলবাদী দলও। কিন্তু এই মুহূর্তে নির্বাচনকে গুরুত্ব না দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়েই চিন্তিত ইউনুস সরকার। এমনই দাবি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর। ফলে আগামী এক-দেড় বছরে কী হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ? এর উত্তর রয়েছে সময়ের গর্ভেই।