সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ”ওরা সংখ্যায় মাত্র ১৫০০ জন! এ দিকে আমরা ৫০,০০০-এর কাছাকাছি! তার পরেও কামাতিপুরা যৌন ব্যবসার নামে পরিচিত হবে কেন?”
প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন ইয়াসিনা আহমেদ। মুম্বইয়ের কামাতিপুরার বাসিন্দা।
এই আমরা-ওরা শ্রেণিবিভাজনই এখন মূল সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম যৌনপল্লী কামাতিপুরার ক্ষেত্রে। একটা সময় যৌন ব্যবসার জন্যই প্রসিদ্ধ ছিল কামাতিপুরা। পরিচিতি পেয়েছিল এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম যৌনপল্লী হিসেবে।
দিন যত এগিয়েছে, কামাতিপুরা উন্নত হয়েছে। যৌন ব্যবসা ছাড়াও স্কাইরাইজ এবং সময়ের হাত ধরে চকচকে হয়েছে কামাতিপুরা। কিন্তু, মুখ থুবড়ে পড়েছে যৌনব্যবসা। যত দিন যাচ্ছে, ততই কামাতিপুরার দেহব্যবসার দশা করুণ থেকে করুণতর হয়েছে।
কারণটা মূলত আর্থ-সামাজিক। ইয়াসিন যেমন প্রতিবাদ ছুঁড়ে দিয়েছেন, তার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে কামাতিপুরার বাসিন্দাদেরও গলায়। তাঁদের অভিযোগ, যৌনকর্মীরা মাঝে মাঝেই তাঁদের ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট গলি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রাজপথে। তখন তাঁদের দৌরাত্ম্যে পথচারীরা বিপদের মুখে পড়েন। ফলে, থানায় অভিযোগ জমা পড়তে থাকে। তার জেরে শেষ পর্যন্ত হতাশা আর ধাক্কার মুখোমুখি হতে হয় যৌনকর্মীদেরই।
”আমরা গলি ছেড়ে রাস্তায় বেরোলেও প্রতিবাদের মুখে পড়ি! দোকানে তেল, সাবান কিনতে গেলেও আমাদের লক্ষ্য করে খারাপ কথা বলা হয়। অনেক সময়েই অনেকে গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগিয়ে মারতে আসেন। এরকম হলে আমরা কোথায় যাবো?” বাসিন্দাদের প্রতিবাদের বিপরীতে অসহায়তা ফুটে উঠেছে যৌনকর্মীদের বক্তব্যে।
তবে, সমস্যা হল, দুই পক্ষের কেউই মিথ্যে বলছেন না। যেমন, কামাতিপুরার যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা এক এনজিও-কর্মী জানিয়েছেন, তাঁরা যখন বছর পাঁচেক আগেও কাজ শুরু করেন, তখন এলাকার অনেক গলিতেই রমরমিয়ে দেহব্যবসা চলত। এখন সেই সংখ্যাটা এসে ঠেকেছে কেবল দুটি গলিতে। ১১ আর ১২ নম্বর গলি! অন্য দিকে, রূপান্তরকামীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে আর একটি গলি। সব মিলিয়ে, এই তিনটি গলিতেই অত্যাচার আর অসহায়তা সম্বল করে ধুঁকছে যৌনব্যবসা।
সঙ্গে রয়েছে পুলিশের জুলুম! মাঝে মাঝেই পুলিশ কারণ না থাকলেও যৌনকর্মীদের ভয় দেখায়, তাদের ডেরায় হানা দেয়। তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়ে যায় মোটা অঙ্কের টাকা।
তবে, কামাতিপুরার সবাই যে যৌনকর্মীদের দুর্দশায় খুব খুশি- এমনটা কিন্তু নয়। প্রতিবাদের সঙ্গে মিশেছে সমর্থনও! যেমন এলাকার এক হাইরাইজের বাসিন্দা আনওয়ার আহমেদ শেখ জানিয়েছেন, যৌনকর্মীদের নিয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। তেমনই সমস্যা নেই এলাকাটা যদি নিষিদ্ধপল্লী হিসেবে পরিচিত হয়!
কারণ বাড়ি ভাড়া! শুধুমাত্র দেহব্যবসার প্রসঙ্গ জড়িয়ে আছে বলেই কামাতিপুরা এলাকায় ঘরের ভাড়া কম। মুম্বইয়ের মতো এলাকায় যা পাওয়া বেশ চাপের!
”যদি মনে হয়, কামাতিপুরা নামটা নিয়ে সমস্যা আছে, তাহলে নাম বদলে দেওয়া হোক! তাহলেই সমস্যা মিটে যায়”, ইয়াসিনের বক্তব্যের বিপরীতে এ কথা জানিয়েছেন আনওয়ার!
সব মিলিয়ে কামাতিপুরার যৌনব্যবসা এবং যৌনকর্মীরা রয়েছেন বিপদসীমাতেই! এরকম চলতে থাকলে একসময়ে তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে- এমন ভয়ও পাচ্ছেন তাঁরা।
কী হবে শেষ পর্যন্ত, তার উত্তর অবশ্য ভবিষ্যৎ দেবে!
The post বন্ধের মুখে মুম্বইয়ের নিষিদ্ধপল্লী! appeared first on Sangbad Pratidin.