অভিরূপ দাস: এক মঞ্চে সকলে। বছরের শুরুতে আবার যেন চলচ্চিত্র উৎসব। হাজির থাকবেন বিনোদন জগতের তাবড় নক্ষত্ররা। তবে সিনেমা দেখতে নয়, স্মৃতিচারণা করতে।
‘দাদাসাহেব’ মৃণাল সেনের মৃত্যুর পর নক্ষত্র সমাবেশের কথা ভেবেছে ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন বা আইপিটিএ। সংস্থার সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “শুধুমাত্র বাংলা নয়, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের আঙিনায় মহীরুহ-সম ছিলেন মৃণালবাবু। তাঁর স্মৃতিচারণায় আমরা সকলকে বলব। কেউ সে তালিকা থেকে বাদ যাবেন না। চলচ্চিত্র জগতের প্রতিটি মানুষ, তারা যে অঙ্গনেই কাজ করুন। গান-নাটক-সিনেমার বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল ত্রয়ীর মধ্যে শেষ ধ্রুবতারা অস্ত যাওয়ার পর ‘মনে রাখার মতো’ একটি স্মৃতিচারণা করতে চায় আইপিটিএ। জীবদ্দশায় বামপন্থী এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন পরিচালক। বিভিন্ন সময়ে তাঁর পরামর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে আইপিটিএ। এত নক্ষত্রের সমাবেশ। কোথায় হবে এই স্মৃতিচারণা? মৃণাল সেনের অতি পছন্দের কফিহাউস নাকি তাঁর একসময়ের প্রিয় কোনও প্রেক্ষাগৃহে, এখনও তা ঠিক হয়নি। তবে জানা গিয়েছে, মৃণাল সেনের ছেলে কুণাল সেন শিকাগো থেকে ফিরলেই তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন আইপিটিএ-র সদস্যরা।
[এই কলকাতা ’১৮—য় তিনি গতকালের হয়ে গেলেন]
ফি বছর জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে আসতেন বিনোদন জগতের অনেকেই। শেষের দিকে কথা বলতে পারতেন না পরিচালক। আইপিটিএ-র সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “জন্মদিনটা বাদ দিয়ে অন্যান্য দিন আসতাম আমরা। আসলে এই দিনটায় তো কেউ না কেউ আসতেনই। আমরা তাই একটা সাধারণ দিন বেছে নিতাম। তাতে উনি খুশিই হতেন।” শেষ তিন বছর বিছানাই ছিল তাঁর সঙ্গী। ভবানীপুরের এ বাড়ির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে পরিচালকের দিনযাপনের গল্প। সে বাড়ি মিউজিয়াম হলে মন্দ কী? দিব্যেন্দুবাবুর কথায়, “মৃণাল সেনের বাড়িটি মিউজিয়াম করা যেতে পারে। তবে তাঁর পরিবারের লোকই এই নিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা একটা প্রস্তাব দিতে পারি।”
সাতের দশকের গোড়ার দিকের কথা। কফি হাউসের কোনের টেবিলটা গমগম করত আড্ডায়। সত্যজিৎ-মৃণাল ঋত্বিকের ‘ইনফিউশন’ আর চারমিনারের যুগলবন্দি জন্ম দিয়েছে কাল্ট হয়ে যাওয়া কিছু চলচ্চিত্রের। বন্ধুরা চলে গিয়েছেন কবেই। তারপরও একাই আসতেন তিনি। কফি হাউস তো তাঁর কাছে চর্চার আঁতুড়ঘর। কে জানে কোন ব্ল্যাক কফি তাঁর চিত্রনাট্যের খাতায় ভুবন সোমের ভ্রূণের জন্ম দিয়েছিল। সালটা ২০০৯, এই কফি হাউসেই আয়োজন করা হয়েছিল রক্তদান শিবিরের। কফি হাউস সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সাড়া দিতে ভোলেননি পরিচালক। লেখক বুদ্ধদেব গুহ, সংগীত পরিচালক সুপর্ণকান্তি ঘোষের পাশে তাঁরও সই ছিল সেদিনের শংসাপত্রে। কফি হাউস সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ২০১৯-এর ৯ জানুয়ারি ফের এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছে। এবার যেন বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পালা। সেখানেই বিশেষভাবে স্মৃতিচারণ করা হবে মৃণাল সেনের। কফি হাউস সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অচিন্ত্যকুমার লাহা জানিয়েছেন, “একটা অন্যধরনের স্মৃতিচারণা করব আমরা। মৃণালবাবুকে স্মরণ করে আমরা একটা বিশেষ ব্যানারও তৈরি করছি। যাঁরা যেভাবে পরিচালককে চিনতেন, সকলে আসুন ৯ জানুয়ারি কফি হাউসে।”
[নির্ঝঞ্ঝাট-সমান্তরাল জীবনের বাইরেও একটা ‘ভুবন’ আছে, দেখিয়েছিলেন মৃণাল সেন]
The post স্মৃতিতে থাকবেন মৃণাল সেন, পরিচালকের বাড়ি মিউজিয়াম করার প্রস্তাব appeared first on Sangbad Pratidin.