দেব গোস্বামী, বোলপুর: রক্তের কোনও ধর্ম হয় না। রমজান মাস মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র মাস। এই মাসে রোজা রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। একেবারে সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে রোজা ভাঙার নিয়ম। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলেই রোজা রাখেন। আর এই রোজা ভেঙে রক্ত দিয়ে হিন্দু বোনের প্রাণ বাঁচিয়ে নজির গড়লেন মুসলিম ভাই। সোমবার এমনই সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়ল বোলপুরে।
থ্যালাসিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জন্মের পর থেকেই ভোগান্তির শিকার লাভপুর ফিড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্রততী মাঝি। বয়স ১৬ বছর। রক্তাল্পতায় ভুগছিল বেশ কিছুদিন ধরে। রক্তের প্রয়োজন। বি পজিটিভ এক ইউনিট রক্তের সন্ধানে হন্যে হয়ে রক্তদাতা খুঁজছিলেন নাবালিকার বাবা। বোলপুরের গৃহশিক্ষক ও সমাজকর্মী শ্যামল মাজি শোনা মাত্রই তাঁর মুসলিম ছাত্র শেখ নূর ইসলামকে সবিনয়ে অনুরোধ করেন বোনকে রক্ত দেওয়ার জন্য। নূরও কোনরকম দ্বিধা না করেই হাসিমুখে রমজান মাসে রোজা ভেঙে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন বোলপুর মহকুমা সিয়ান হাসপাতালে।
[আরও পড়ুন: ‘গ্রেপ্তার না হলে আমাকে টিকতে দিত না’, বিধায়ক জীবনকৃষ্ণর গ্রেপ্তারির পর দাবি বাবার]
ব্রততীর বাবা প্রদীপ মাঝি জানান, বি পজিটিভ রক্ত নেই বোলপুরে। দীর্ঘদিন ধরেই হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন পরিবারের লোকজন। রক্ত না পেয়ে হতাশ হয়েই ফিরছিলেন সকলে। দালাল চক্রের সঙ্গেও যোগাযোগ করে প্রতারিতও হন। চিন্তায় ছিলেন রক্ত মিলবে কীভাবে। এই অবস্থায় একেবারে দেবদূতের মতো এলেন নূর। অন্যদিকে শেখ নূর ইসলাম জানান, শিক্ষক শ্যামল মাজির ফোন পাওয়ার পরপরই জানতে পেরে ছুটে আসেন। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত একটা ছোট বোনকে রক্ত দিতে পেরে ভাল লাগছে তাঁরও। বলেন, “রোজা ভেঙেই রক্ত দিলাম,কারণ মানুষের জীবনের দাম রোজার থেকে অনেক বেশি মূল্যবান। এতে আল্লা অনেক বেশি খুশি হবেন।”
সমাজকর্মী শ্যামল মাজি জানান, বীরভূমে চরম রক্ত সংকট চলছে। এই সংকটের মুহূর্তে ছোট ছোট রক্তদান শিবির করার প্রয়োজন। রক্তের কোনও ধর্ম বা জাতা হয় না। শেখ নূর ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, আগামী দিনে মানুষকে তা সঠিক দিশা দেখাবে।