বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: প্রেমের টান তো কোনও বাধাই মানে না। অবশ্য এ আবার যে সে বাধা নয়, একেবারে সীমান্তের কাঁটাতারের বাধা। তবে ভালবাসার দুর্নিবার টানে সেই সীমান্তের বাধা পেরিয়ে ভারতীয় যুবক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন বাংলাদেশের (Bangladesh) যুবতীর সঙ্গে। চার হাত এক হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরতে গিয়েই অবশ্য ‘কাহানি মে টুইস্ট’। যা মনে করিয়ে দিল বলিউডের বিখ্যাত রোম্যান্টিক সিনেমা ‘বীর জারা’র কথা। কাঁটাতার পেরিয়ে ফেরার পথে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরে পড়ে গ্রেপ্তার (Arrest) হয়ে গেল নবদম্পতি। কারওরই বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নেই। পরিচয় একটাই, দু’জনে এখন স্বামী-স্ত্রী, একে অপরের সাত জন্মের সঙ্গী। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন সে কথা মানে না। আইনি পরিচয়পত্র না থাকায় আপাতত এই যুগল এখন বিচারাধীন বন্দি। কবে মুক্ত হয়ে ঘর বাঁধতে পারবে দোঁহে? তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
জয়কান্ত চন্দ্র রায় নামে ২৪ বছর বয়সি ওই যুবকের বাড়ি নদিয়া (Nadia) শান্তিপুর থানা এলাকার একটি গ্রামে। আর অস্টাদশী যুবতীর বাড়ি বাংলাদেশের নেরাইল থানা এলাকার এক গ্রামে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উভয়ের আলাপ-পরিচয়-বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং পরিণয়। একে অপরের পাশে থাকার চির অঙ্গীকার করে ফেলার পর কীভাবে তা সম্ভব, সেই পথ খুঁজতে থাকে উভয়েই। যুবক জয়কান্তের বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নেই। আর মেয়েটি তো কোনওদিন এসবের কথা ভাবেইনি। কারণ, সীমান্তের অপর পাড়ে তার অপেক্ষায় বসে থাকা কোনও যুবকের সঙ্গে সলে ঘর বাঁধার কথাই কল্পনা করেনি কখনও। কিন্তু প্রেমের টান যে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই দু’জনে ঠিক করেন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। আর আইনি নথিপত্র ছাড়াই সেই কাজে পা বাড়ান জয়ন্ত।
[আরও পডুন: খাবারের সঙ্গে পেটে চলে গেল ধাতব বস্তু! যন্ত্রণায় কাতর ষাঁড়কে নিয়ে শোরগোল ধুপগুড়িতে]
পুলিশ ও বিএসএফ (BSF) সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরিকাকে বিয়ে করবেন বলে জয়কান্ত বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে যাওয়ার ঝুঁকি নেন। তারকনগরের বাসিন্দা এক দালালকে ধরে অবৈধ পথে এবছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে চলে যান। ওপারে বাংলাদেশ তখন বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। ঠিক দু’দিন পর, ১০ মার্চ সামাজিক মতে তাদের বিয়ে হয়। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নববধূকে নিয়ে গত ২৫ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলেন জয়কান্ত। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ”স্ত্রীকে নিয়ে একইরকমভাবে অবৈধ পথে ভারতে আসার জন্য রাজু মণ্ডল নামে এক বাংলাদেশি দালালকে তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।” অবৈধপথে প্রায় চলেই এসেছিলেন ভারতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
নদিয়া জেলার ভীমপুর থানার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশের মধুপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ওই নবদম্পতিকে ধরে ফেলেন। বেআইনি অনুপ্রবেশ, বৈধ পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে যাওয়ার অভিযোগ-সহ একাধিক আইনে ভারতীয় নাগরিক জয়কান্ত এবং বাংলাদেশি নাগরিক সাগরিকাকে বিএসএফের জওয়ানরা গ্রেপ্তার করেন। ধৃত ওই দম্পতিকে তুলে দেওয়া হয় ভীমপুর থানার পুলিশের হাতে।
[আরও পডুন: বাঁকুড়া-নদিয়ার পর মুর্শিদাবাদে জাল আধার কার্ড চক্রের হদিশ, ধৃত ৩ পাণ্ডা]
বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার সঞ্জয় প্রসাদ সিংহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ”আমাদের গোয়েন্দা শাখার আধিকারিকেরা ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর নিশ্চিত হন যে, দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ধৃত ওই পুরুষ বৈধ পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। আবার বৈধ পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই একজন মহিলাকে তিনি নিয়ে ভারতে আসছিলেন। দুটোই গুরুতর অপরাধ। তাই দু’জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” পুলিশের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, ”দু’জনেই বর্তমানে বিচারবিভাগীয় বন্দি হিসেবে রয়েছেন। ফরেনারস ও পাসপোর্ট আইনে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দুজনে যে বিবাহিত, তা নিশ্চিত করা গিয়েছে।” বিচার ব্যবস্থায় এখন ওই নবদম্পতির কী শাস্তি হয়, সেটা বলবে ভবিষ্যৎ।