নয়াদিল্লি: আমআদমির জন্য আঙুলের ছাপের অর্থ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আধার কার্ড (Aadhar Card)। বায়োমেট্রিক এই পদ্ধতির মাধ্যমে মানবশরীরের অনন্য বৈশিষ্ট্য আলাদা করে শনাক্ত করা যা প্রতিটি মানুষকে। কিন্তু অপরাধী শনাক্তকরণে আঙুলের ছাপের ব্যবহার অনেক পুরনো। তবে এবার তার জন্যই তৈরি হচ্ছে নতুন ডেটা ব্যাঙ্ক-নাফিস।
ন্যাশনাল অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্টস আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম বা নাফিস। এই ডেটাবেসেই সংগৃহীত থাকবে প্রতিটি অপরাধীর আঙুলের ছাপ। আঙুলের ছাপ থেকে যে অপরাধীদের শনাক্ত করার একটা উপায় হতে পারে তা জানা যায় ১৮৫৮ সালে। উইলিয়ামস জেমস হার্শেল নামে বাংলায় পোস্টেড ব্রিটিশ এক আইসিএস অফিসারই প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে আঙুলের ছাপ থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করা যেতে পারে। পরবর্তীতে সেই পথ ধরেই এগিয়েছে অপরাধ বিজ্ঞান। আর এবার অপরাধীদের জন্য অনন্য ডেটাবেস তৈরি করছে কেন্দ্র।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বা এনসিআরবি-র তথ্যের উপর নির্ভর করেই কাজ করবে নাফিস (NAFIS)। এই ডেটাবেসে কোনও অপরাধীর সমস্ত অপরাধ বিষয়ক তথ্য এবং তাঁর আঙুলের ছাপ সঞ্চিত থাকবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উদ্বোধন করলেন নতুন এই অপরাধী শনাক্তকরণ ব্যবস্থার। প্রতিটি ব্যক্তি বা অপরাধীর আঙুলের ছাপকে একটি দশ অঙ্কের অনন্য নম্বরে নির্দিষ্ট করা হবে-ন্যাশনাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট (Fingerprint) নাম্বার বা এনএফএন। কোনও ব্যক্তি গ্রেফতার হলেই তাঁর আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে তৈরি করা হবে এই ইউনিক আইডি এনএফএন। যা ওই অপরাধীর জন্য আজীবন থেকে যাবে পুলিশের ডেটাবেসে। যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন এফআইআর-এর রেফারেন্সে ব্যবহার করা হবে এনএফএন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটাবেস থেকে আঙুলের ছাপের সাহায্যে যুক্ত করবে পুরনো সমস্ত অপরাধের খতিয়ান। দশ অঙ্কের সংখ্যার প্রথম দু’টি অঙ্ক নির্দিষ্ট করবে কোন রাজ্য থেকে প্রথমবার গ্রেফতার হন নির্দিষ্ট অপরাধী। পরবর্তীতে এর সঙ্গে জুড়তে থাকবে পরের সমস্ত অপরাধের হিসেবনিকেশ।
[আরও পড়ুন: প্রেমিকার সঙ্গে ধরা পড়ে স্ত্রীর হাতে জুতোপেটা, দল থেকে বহিষ্কৃত যোগীরাজ্যের বিজেপি নেতা]
কয়েক বছর আগে পর্যন্তও অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ বলতে তদন্তকারীদের নির্ভর করতে হত ‘মাগশটস’ অর্থাৎ কোনও ব্যক্তির মুখের বিভিন্ন পাশ থেকে তোলা ছবির উপর। অপরাধী বিষয়ক ফাইলে থাকত নানা দিক তোলা মুখ ও শরীরের ছবি এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য। সঙ্গে আঙুলের ছাপও থাকত। কোনও বিশেষ অপরাধীর সম্পর্কে তথ্য পেতে গোয়েন্দাদের সংগ্রহ করতে হত এই সমস্ত তথ্য। দুর্ঘটনা কিংবা কোনও এনকাউন্টারে অপরাধীর মুখ বা অন্যান্য অঙ্গ নষ্ট বা বিকৃত হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে কাজে আসত অন্যান্য বৈশিষ্ট্য। ঠিক যেমন অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে খতম করার পর নিশ্চিত হওয়ার জন্য মার্কিন নেভি সিল শেষ ভরসা রেখেছিল আল কায়েদা প্রধানের শারীরিক দৈর্ঘ্যের উপরেই। তবে এবার ভারতে কাজ করবে আঙুলের ছাপের অন্যন্যতাই।
সব কিছুকে এক ছাদের তলাতেই শুধু নয়, কম্পিউটারের ক্লিকে আনার কাজ করবে নাফিস। দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে শুধুমাত্র আঙুলের ছাপের সাহায্যে অপরাধীর পুরনো অপরাধ থেকে অন্যান্য তথ্য, মিলবে সবই। ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ডেটাবেসের সঙ্গে যুক্তি করা হবে নাফিস-এর ডেটাবেস। ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল পুলিশ কমিশন প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাব করে। ১৯৯২ সালে প্রথম অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ব্যবস্থা এই প্রস্তাবকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যায়। নাফিস তাকে একধাক্কায় আরও অনেকটা এগিয়ে দিল।