সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এত বছরের ‘অধ্যবসায়’ সম্পূর্ণ, পিছু হঠেছে বাধাবিপত্তিও। এবার ফল পাওয়ার পালা। সমস্ত প্রস্তুতি, পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার অবশেষে লাল গ্রহের উদ্দেশে উড়ে যাচ্ছে নাসার মঙ্গলযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’ (Perseverance)। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৫০ নাগাদ ফ্লোরিডা থেকে রওনা দেবে ছ’চাকা বিশিষ্ট এক টন ওজনের যানটি। মঙ্গলের মাটিতে নামবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। পারসিভিয়ারেন্সের যাত্রা উপলক্ষে ইতিমধ্যে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে ভিড় জমিয়েছেন বিজ্ঞানী এবং উৎসাহী মানুষজন। নাসার এমন এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের সাক্ষী থাকতে চান সকলে। এর আগে তিনবার বাতিল হয়েছে পারসিভিয়ারেন্সের যাত্রা।
আসলে পারসিভিয়ারেন্সকে নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে মহাকাশবিজ্ঞানীদের। বলা হচ্ছে, মঙ্গল অভিযানের জন্য এত উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে আর কোনও যানই তৈরি হয়নি এর আগে। সেদিক থেকে নাসার আগের মঙ্গলযান ‘কিউরিওসিটি’র খামতিগুলো পূরণ করে দিয়েছে পারসিভিয়ারেন্স। এতে যেমন ২৩ টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা আছে, তেমনই রয়েছে মাইক্রোফোন, প্রচুর ছোটখাটো যন্ত্র। যা মঙ্গলের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে কোনও নমুনা সংগ্রহের পর নিজেই প্রাথমিক বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট পাঠাবে নাসার দপ্তরে। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ অনেকটা এগিয়ে দেবে পারসিভিয়ারেন্স।
[আরও পডুন: পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে গ্রহাণু, বিরল আবিষ্কারের জন্য ২ ভারতীয় ছাত্রীকে কুর্নিশ নাসার]
এই মঙ্গলযানে একসঙ্গে তেইশ ক্যামেরা লাগানোটাই একটা বড়সড় কাজ ছিল। গোটা অপারেশনের নাম দেওয়া হয় MastcamZ। আর এই দায়িত্ব যিনি সামলেছেন, সেই বিজ্ঞানী জিম বেল বলছেন, “এই যানটি উড়বে, মঙ্গলের মাটিতে নামবে, সেখানে কাজ করবে – এই সমস্তটা আমরা যে শুধু ক্যামেরার সাহায্য এখানে বসে দেখতে পাব তাইই নয়। পারসিভিয়ারেন্সে অনেকগুলো মাইক্রোফোন থাকায় আমাদের কাছে শব্দও এসে পৌঁছবে। সেই শব্দও গবেষণার একটা অঙ্গ হয়ে উঠবে।”
তবে পারসিভিয়ারেন্সের অন্যতম মুখ্য কাজ হবে, লাল গ্রহের নিরক্ষীয় অঞ্চলের বিভিন্ন নমুনার জৈব বিশ্লেষণ। জানা গিয়েছে, মঙ্গলের ‘জেজেরো ক্রেটর’ (Jezero Crater), সহজ ভাষায় যা হ্রদ, সেখানে একসময়ে বিপুল জলধারা বয়ে যেত। তার জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকায় পলির মতো একটা স্তরও আছে। পারসিভিয়ারেন্স নামবে ঠিক এই অংশের পাশেই। এখানকার নমুনা সংগ্রহ করে তার জৈব ও রাসায়নিক বিশ্লেষণ করবে। আর সেখানেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে না নেই, তার অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। যদি ওই পলিস্তরের মধ্যে কোনও অনুজীবীর বেঁচে থাকারও কোনও উপকরণ মেলে, তাহলে বুঝতে হবে, একদা এই প্রতিবেশী গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। এছাড়া এই অংশের পাথরের গঠন নিয়েও পরীক্ষা করবে পারসিভিয়ারেন্স।
[আরও পডুন: লক্ষ্য আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়া, নাসার পারসিভিয়ারেন্সের আগেই মঙ্গলে যান পাঠাল চিন]
তবে এসব কৌতূহল নিরসনের জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নাসার এই অত্যাধুনিক মঙ্গলযানের সফল অবতরণের পরই কাজ শুরু হবে। আপাতত তার যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বিজ্ঞানীরা।
The post কাটল সব বাধাবিপত্তি, মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান করতে আজই উড়ে যাচ্ছে নাসার ‘পারসিভিয়ারেন্স’ appeared first on Sangbad Pratidin.