সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডাইনি কি শুধু রূপকথাতেই বিদ্যমান? বর্তমান পৃথিবীতে কি এদের কোনও অস্তিত্ব রয়েছে? এই নিয়ে লৌকিক-অলৌকিক দ্বন্দ্ব চিরাচরিত। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ডাইনির কথা বিশ্বাস না করলেও গ্রামের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আজও ডাইনির কথা বিশ্বাস করে। গ্রামের কোনও অস্বাভাবিক মহিলার মাথায় এঁটে যায় এই তকমা। তাই গ্রামে বেশিরভাগ শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলা এভাবেই বাঁচতে অভ্যস্ত। গ্রামের শেষপ্রান্তে প্রায় ব্রাত্য। অবস্থায় জীবন কাটায় তারা। ওড়িশার গঞ্জাম জেলার এমনই একটি ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে।
গঞ্জাম জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাসিন্দা নায়ক কুমারী। বয়স ৬৩ বছর। জন্ম থেকেই কার্যত শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। তাই ছোট থেকেই প্রতিবেশীদের গঞ্জনা সহ্য করে বেড়ে উঠতে হয়েছে তাঁকে। ছোট থেকেই তাঁকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হত। কারণ একটাই। তাঁর পা ও হাতের আঙুল। প্রকৃতির খেয়ালে তাঁর দু’টি পা ও হাত অস্বাভাবিক। তাঁর ২০টি পায়ের আঙুল ও ১২টি হাতের আঙুল। ‘এমন অস্বাভাবিক পা বা হাত কোনও স্বাভাবিক মানুষের হতে পারে? অতএব, এই মেয়ে ডাইনি।’ এমনই মত স্থানীয়দের।
[ আরও পড়ুন: ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছেন ফুটপাথবাসী, অথচ শীতের পোশাক দেওয়া হচ্ছে গরুদের! ]
প্রথম প্রথম এমন কথা শুনতে ভাল লাগত না। মন খারাপ হত নায়ক কুমারীর। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, এমন গঞ্জনা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন এসব মাথায় নিয়েই মৃত্যুর দিন গুনছেন তিনি। ষাটোর্ধ্ব ওই মহিলা জানিয়েছেন, “আমি একটা বিকৃতি নিয়ে জন্মেছি। কিন্তু কোনও চিকিৎসা করাতে পারিনি। কারণ, আমার পরিবার খুব গরীব। গ্রামের লোকেরা মনে করে আমি ডাইনি। তাই আমাকে আমার নিজের বাড়ি ছেড়ে আজও দূরে থাকতে হয়।” কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে মহিলার। চোখ ভেসে যায় অশ্রুতে।
চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে নায়ক কুমারীর যে রোগটি হয়েছে, তার নাম পলিডাকটিলি। অস্ত্রোপচার বিশেষজ্ঞ পিনাকি মোহান্তে জানিয়েছেন, ২০টি পায়ের আঙুল ও ১২টি হাতের আঙুল নিয়ে জন্মানো খুব বিরল ঘটনা। “পলিডাকটিলি আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। এক্ষেত্রে জন্ম থেকেই অতিরিক্ত আঙুল রোগীর শরীরে দেখা যায়। জিনগত কারণেই এই সমস্যা তৈরি হয়। নায়ক কুমারীর ব্যাপারটি বিরল হলেও পলিডাকটিলি একেবারেই বিরল রোগ নয়। প্রতি পাঁচ হাজার শিশুর মধ্যে এক থেকে দু’জনেই এই রোগ হতে পারে।” বলেন তিনি।
বিজ্ঞান একে বিরল রোগ বললেও গ্রামের মানুষ এখনও মেনে নিতে পারেনি নায়ক কুমারীকে। তাই ৬০টি বসন্ত দেখে ফেলার পরও সুদিন এল না তাঁর জীবনে। এখনও গ্রামের বাইরে একটি কুঁড়েঘরে দিনযাপন করেন তিনি। আর দোষ দেন নিজের ভাগ্যকে, কেন তাঁর জীবন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো হল না?
[ আরও পড়ুন: অবাক কাণ্ড! মুকুট চুরির আগে দেবীর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইল চোর ]
The post পায়ে ২০টি আঙুল, লোকালয় থেকে দূরে অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধা appeared first on Sangbad Pratidin.