shono
Advertisement

নেপালে হিন্দু রাষ্ট্র ফেরাতে রাজতন্ত্রীদের হাতে হাত কমিউনিস্ট ওলির!

রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি করছেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী মনীষা কৈরালাও।
Posted: 01:16 PM Nov 25, 2022Updated: 01:38 PM Nov 25, 2022

শংকর ভট্টাচার্য, কাঠমান্ডু: সেদিন ভোট প্রচার তুঙ্গে। কাঠমান্ডুর বসন্তপুর এলাকায় আচমকাই প্রচারে নেমে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি বললেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। না, তিনি এবারে ভোটে দাঁড়ান নি। কিন্তু রাজতন্ত্র আবার নেপালে ফিরিয়ে আনা কতটা দরকার, তা ঘুরে ঘুরে ব্যাখ্যা করছেন। অথচ এই মনীষার দাদু বি পি কৈরালা একসময় রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তিনি নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ১৮ মাস ক্ষমতায় থাকার পর তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র তাঁকে বরখাস্ত করে জেলে পাঠিয়েছিলেন।

Advertisement

সেই বি পি কৈরালার নাতনি কেন প্রচার করছে রাজতন্ত্র ফেরানোর? কেন রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির হয়ে এত কথা বলছেন? নেপালের রাজনীতিতে আরও বিস্ময়, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্ক্সবাদী- লেলিনবাদী) নেমে পড়েছে সেই রাজতন্ত্র ফেরাতে। পাহাড়ি দেশের কমিউনিস্টদের সব থেকে বড় পার্টির এই অবস্থানও বাংলার বামপন্থীদের স্বভাবতই বিস্মিত করছে।

[ আরও পড়ুন: পাকিস্তানের মতো রাশিয়াও ‘সন্ত্রাসের মদতদাতা দেশ’! ঘোষণা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের]

গত কয়েকদিন নেপালের (Nepal) তরাই আর পাহাড়, দুই অংশেই ঘুরে মনে হল, এই ছোট্ট দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। দুর্নীতি, আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, কর্মহীনতা আর অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে বড় অংশের মানুষকে। বিমানবন্দরে বিদেশে যাওয়ার চারটে লাইন। দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক ছুটছেন আরব মুলুকে। বাকিরা ভারতে চলে আসছেন ছোট কাজের আশায়। রাজতন্ত্রের অবসান, মাওবাদীদের ক্ষমতায় আসা, কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিশ্রুতি, কিছুই ‘আচ্ছে দিন’ দেখায়নি। এর উপর রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির তীব্র ভারত বিরোধী অবস্থান। যা কিছু মন্দ, সবই ভারতের জন্য। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে নির্দলদের প্রতি ঝোঁক, অন্যদিকে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে। রাজামশাই ফিরে এলেই যেন সব ঠিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে পাহাড়ি উচ্চ বর্ণের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

নেপাল কার্যত তিন অংশে বিভক্ত। এক, মাধেশি বা সমতলের মানুষ। জনসংখ্যায় এঁরা ৫১ শতাংশ প্রায়। এদের মধ্যে আছে ভোজপুরী, মৈথিলি, আওধী, রাজবংশী আর মুষ্টিমেয় বঙ্গভাষী। দ্বিতীয় অংশে আছেন জনজাতী। যাঁদের আমরা দার্জিলিং, কালিম্পিঙ, কাশিয়াং এ বেশি দেখি। মগর, গুরুং,থাপা সহ অন্যরা। আর তৃতীয় তথা প্রধান শক্তি হচ্ছেন নেপালের পাহাড়ি উচ্চ বর্ণের মানুষ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় আর বৈশ্যরা। ‘বাউন- ছেত্রী’ রাজ চলে কাঠমান্ডু উপত্যকা থেকে। নেপালের রাজনীতির মূল শক্তি এই অংশ। নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাতটি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে দেশকে। সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো পছন্দ নয় রক্ষণশীলদের। এই পরিস্থিতিতেই কিন্তু রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ঝোঁক।

প্রশ্ন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির দল কেন এই পক্ষে। তার জন্য ফিরে যেতে হবে পিছনে। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালে কলকাতায়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পুষ্পলাল শ্রেষ্ঠ বা পি এল। তিনি নেপালী কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজতন্ত্রের অবসানের ডাক দেন। তাঁকে সরিয়ে পার্টির ক্ষমতায় আসেন কেশর জং রায়মাঝি। তিনি ভূস্বামী পরিবারের সন্তান ছিলেন। পেশায় চিকিৎসক। তাঁর লাইন ছিল রাজার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারত বিরোধিতা। সিপিআই নেতা দার্জিলিংয়ের রতনলাল ব্রাহ্মণের হাত ধরে তাঁর রাজনীতি শিক্ষালাভ। সেই লাইনেই ভারত বিরোধী, রাজতন্ত্রের সমর্থক ওলি এবং তাঁর দল।

নেপালে গত কয়েক বছরে চিনের আধিপত্য বেড়েছে। টিভি খুললেই বা রাস্তার হোর্ডিং, সর্বত্রই শিবম সিমেন্ট বা বিভিন্ন নির্মাণ শিল্পের বিজ্ঞাপন। সবই চিনের (China) বিনিয়োগ। নেপালে রাজা মহেন্দ্রের আমল থেকেই চিনের প্রতি ঝুঁকে ছিল রাজতন্ত্র। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এখন রাজতন্ত্র ফিরিয়ে এনে চিনপন্থী কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় ফেরানো লক্ষ্য বেজিংয়ের। আর সেই লক্ষ্যেই রাজা- বাম-ব্যবসায়ী- উচ্চ বর্ণের একাংশের এই অবস্থান। এদিকে, সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু সংসদ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  

[ আরও পড়ুন: ইউক্রেনে দাপট দেখাচ্ছে ‘জেনারেল উইন্টার’, কিয়েভে ফের আছড়ে পড়ল রুশ ক্ষেপণাস্ত্র]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement