ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: স্বাধীনতার ৭৬ বছর পর দেশের আইন সংশোধনের পথে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পথ কীভাবে তৈরি হবে, স্বাধীনতার পর কীভাবে ‘স্বদেশি আইনে’ দেশ শাসন হবে, দেশের প্রাকৃতিক, খনিজ আর মানব সম্পদের সমন্বয়ে কীভাবে ‘ভারতবর্ষ’ গড়ে উঠবে, তার খসড়া অনেক আগে তৈরি করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Subhas Chandra Bose)। তাঁর ‘প্ল্যানিং কমিশনের’ মূল ভিত্তি ছিল এই খসড়া। লন্ডন আর্কাইভে সেই খসড়ার সবটা রয়েছে। এক এক করে তার প্রতিলিপি জোগাড় করে দেশে আনার কাজ করছে তাঁর হাতে গড়া দল ফরওয়ার্ড ব্লক (Forward Bloc)। সব ঠিক থাকলে নেতাজি জন্মবার্ষিকীর সময়ই তার অনেকটা অংশ সামনে এনে প্রদর্শনী করতে পারে তাঁর দল।
ফরওয়ার্ড ব্লকের বঙ্গ নেতৃত্বের তরফে তাদের এক প্রতিনিধি এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন। তিনিই এক এক করে সমস্ত নথির প্রতিলিপি বঙ্গে আনার কাজ করছেন। যা যা হাতে এসেছে, তার মধ্যে সব থেকে আকর্ষণীয় হল, ১৯৪৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর রেডিওতে ‘আজাদ হিন্দ’-এর লড়াই নিয়ে দেওয়া বার্তা। চিরকুটের আকারে সেই বার্তা সামনে আনছে ফরওয়ার্ড ব্লক। যেখানে ওই বছরই ১৮ আগস্ট তাইহোকুতে নেতাজির বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সেখানে ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে নেতাজির বার্তা, তাঁর মৃত্যুর খবর নিয়ে যে দাবি, তার পরিপন্থী। স্বাভাবিকভাবেই রীতিমতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চলেছে এই প্রদর্শনী। ফরওয়ার্ড ব্লক কোন আদর্শে তৈরি হবে, তার খসড়া ম্যানিফেস্টোও মিলেছে। থাকছে এমন নানা নথি।
[আরও পড়ুন: গাছ লাগানোর বেড়ার জলে ডেঙ্গু মশার চাষ, পুরসভার মাথাব্যথা দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলও]
দলের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দেশের সবরকম সম্পদের সমন্বয়ে দেশ কীভাবে গড়ে উঠবে তার খসড়া নেতাজি লিখে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশনে। সেই নথি কেন্দ্র সরকার সামনে আনেনি। তাঁর কথায়, “নেতাজি চেয়েছিলেন, কোনও দেশের কার্বন কপি নয়, দেশের স্বাধীনতার পথ, স্বাধীন দেশের পথচলার আইন, সবটাই ভারতীয় মত ও পথের হবে। ভারতীয় সমাজ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপর দঁাড়িয়ে নথি তৈরি হবে। সেগুলোই সামনে আনার কাজ চলছে।” শুধু তাই নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪০-এ ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরির পর দল কীভাবে চলবে, তারও খসড়া করে গিয়েছিলেন নেতাজি।
রাজ্য সম্পাদকের কথায়, “দেশের মানুষের মুক্তির জন্য জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী ব্যবস্থা কায়েম করার ভাবনা ছিল সুভাষবাবুর। একেই বলি সুভাষবাদ। তাঁর এসব দিক আমাদের অজানা ছিল। লন্ডনের আর্কাইভ থেকে সেসবের নানা তথ্য পাওয়া গিয়েছে।” আর্কাইভের নথির ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, নেতাজি ১৯৩৯-এ যে পার্টি কংগ্রেস বা রাষ্ট্রীয় সম্মেলন করেন, তাতে গৃহীত সিদ্ধান্ত, পরবর্তীকালের আরও একাধিক সিদ্ধান্ত সবই লন্ডন আর্কাইভে রয়েছে। রাখা আছে মাদুরাই পার্টি কাউন্সিল, ভুবনেশ্বরের পার্টি কাউন্সিলের সিদ্ধান্তও। আনানো হচ্ছে সেসবও। লন্ডন আর্কাইভে হদিশ মিলেছে তঁার এক সময়ের একটি পাসপোর্টও। তার প্রতিলিপিও আনার চেষ্টা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: হস্টেলে সন্তান, যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুতে ‘কু’ ডাকছে অভিভাবকদের মনে]
তবে সেইসব নথি আসার আগেই দুর্গাপুজোর মুখে সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে তাঁর দুষ্প্রাপ্য ছবির একটি প্রদর্শনী কলকাতায় করবে ফরওয়ার্ড ব্লক। তাতে তাঁর সেই পাসপোর্টের প্রতিলিপিও থাকছে। থাকবে কিছু চিঠিপত্র। ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, এসবের হদিশ এখনও পর্যন্ত নেতাজির উপর কাজ করা দেশের কোনও সংগঠন দিতে পারেনি। নরেনবাবুর কথায়, নেতাজির বিভিন্ন সময়ের ছবি, বিশেষ করে আইএনএ বাহিনীর লড়াইয়ের সময়ের নানা দুষ্প্রাপ্য ছবি নিয়ে ইতিমধ্যে বোলপুরে একটি ছোট প্রদর্শনী হয়েছে। সেটিই বড় আকারে ও আরও ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হবে কলকাতায়। তার সঙ্গে দলের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের কিছু ছবি ও নানা রাজনৈতিক লেখা নিয়েও একটি প্রদর্শনী হবে। সেসব নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করা হবে। নেতাজিকে নিয়ে ছবির প্রদর্শনীর প্রস্তুতি অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। চলছে অশোকবাবুর ছবির কাজ।