সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শহর পুরুলিয়ায় সোনার বিপণিতে ডাকাতির ঘটনায় বিহার বা উত্তরপ্রদেশের যোগ থাকতে পারে। তবে ঝাড়খন্ডের বোকারোতে এই ডাকাতির পরিকল্পনা হয় বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। এই ঘটনায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে বুধবার সিট (স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম ) গঠন হয়। ওই উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন পুরুলিয়ার দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভিযান ও সাধারণ) যথাক্রমে চিন্ময় মিত্তাল ও অম্লানকুসুম ঘোষ। সেই সঙ্গে একাধিক ডিএসপি, ইন্সপেক্টর ও স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ রয়েছে।
মঙ্গলবার ডাকাতির ঘটনার আগে রবিবার ওই দুষ্কৃতীরা ওই বিপণিতে এসে একটি সোনার অলংকারের জন্য অগ্রিম দিয়ে গিয়েছিল। অগ্রিম দেওয়ার দু’দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে ওই সোনার গয়না নিতে এসেই এই ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। এই ঘটনায় এদিন তদন্তে আসেন রাজ্য পুলিশের আইজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) ভরতলাল মীনা । তিনি বলেন, “কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এগোচ্ছি। তদন্ত চলছে।” এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ওই সোনার বিপণির পাশ থেকে একটি দাবিদারহীন মোটরবাইক উদ্ধার করা হয়। ওই মোটর বাইকের ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই মোটর বাইকটি চোরাই বাইক কি না তাও জানার চেষ্টা চলছে।
[আরও পড়ুন: একঘেয়ে মুরগির মাংস ভাল লাগছে না? তৈরি করে ফেলুন সরষে চিকেন, রইল রেসিপি]
এদিন আইজি ওই দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে জানেন। এই ডাকাতির সঙ্গে রানাঘাটের সোনার দোকানের ঘটনায় কোনও যোগ রয়েছে কিনা তা জানতে ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের একটি দল রানাঘাটে রওনা দিয়েছে। ওই ঘটনায় ধৃত দুষ্কৃতীদেরকে জেরা করবে এই দল। কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা- খরসোওয়া জেলার সরাইকেলাতে একটি সোনার দোকানে এমন ডাকাতি হয়েছিল। সেই ডাকাতির সঙ্গেও এর কোন যোগ আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শহর পুরুলিয়ার রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজ এদিন বিপণির কর্মীদেরকে দেখানো হলে তারা ওই দুষ্কৃতীদেরকে চিহ্নিত করেন।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে একটি মোটর বাইকে তিনজন। আর একটি মোটর বাইকে দু’জনের ছবি পাওয়া যায়। মোটর বাইকে যে তিনজন ছিল তারা হকচকিয়ে পালাতে চাইছিলেন। ফুটেজে সেটাই ধরা পড়েছে। তাদের হাতে ছিল লাল ও সাদা রঙের ব্যাগ। ওই ব্যাগ গুলি নিয়েই তারা সোনার দোকানে ঢুকেছিলেন বলে বিপণির কর্মীরা জানান। সিসিটিভি ফুটেজে আরও একটি বাইকে দুই দুষ্কৃতীকে দেখা গেলেও সোনার দোকানের কর্মীদের বয়ান অনুযায়ী মোট ৭ জন ছিল। তাহলে আরও দুজন কি মোটরবাইক ফেলে হাঁটা পথে কোথাও গা ঢাকা দিয়েছে? নাকি পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে ওই মোটরবাইক ফেলে যায়? তাছাড়া এই তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, চলতি মাসের ২৭ তারিখ তারা ওই সোনার অলংকারের জন্য অগ্রিম দেওয়ার পর তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই শহর পুরুলিয়া বা আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছিল। যে দু’জন মোটরবাইক ফেলে হাঁটা পথে চলে গিয়েছে বলে অনুমান তারাই বাকি দুষ্কৃতীদেরকে ‘শেলটার’ দেয়নি তো? এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে এই ঘটনায় গঠিত হওয়া সিট। সোনার দোকানের কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, যারা অগ্রিম দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে থাকা হেলমেট পড়া দুষ্কৃতী এই অপারেশনের নেতৃত্ব দেয়।