বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: শববাহী গাড়ি অর্থাৎ বড় ম্যাটাডোরের চালক চূড়ান্ত মদ্যপ অবস্থায় থাকায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ধরে না রাখতে পারার জন্যই নদিয়ার (Nadia) হাঁসখালির ফুলবাড়িতে ঘটেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এমনই দাবি করেছিলেন অনেকে। কিন্তু মৃত চালকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। জানা গিয়েছে, প্রসেনজিৎ দাসের পাকস্থলীতে মেলেনি অ্যালকোহল। সত্যিই কি গাড়ির চালক প্রসেনজিৎ দাস মদ্যপ ছিলেন? তার রক্তে অ্যালকোহল ছিল কি না, থাকলেও কত শতাংশ, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে মৃতের পাকস্থলী থেকে নেওয়া নমুনা ভিসেরা টেস্টের জন্য কলকাতার ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশ ও ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্তে চালক প্রসেনজিৎ দাসের পাকস্থলীতে অ্যালকোহলের উপস্থিতি মেলেনি। এমনকী রক্ত পরীক্ষার প্রাথমিক নমুনাতেও মেলেনি অ্যালকোহলের প্রমাণ। যদিও তারা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। পুলিশের একজন পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “চালক প্রসেনজিৎ দাসের পাকস্থলীতে অ্যালকোহলের উপস্থিতি স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যায়নি। তাই সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে আমরা পাকস্থলী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ভিসেরা টেস্টের জন্য কলকাতার ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠাচ্ছি। প্রয়োজনে হায়দরাবাদেও পাঠানো হতে পারে। কারণ, বিষয়টি সম্পর্কে পুরো নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তবে ওই পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যাবে। মাসখানেকের বেশি সময়ও লাগতে পারে।”
[আরও পড়ুন: অভিষেকের ডাকে ডায়মন্ড হারবার আসছেন সোনু নিগম, ভিডিও বার্তায় বললেন ‘খেলা হবে’]
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের একজন আধিকারিকের কথায়, “ওই যুবকের পাকস্থলীতে এবং রক্তের নমুনায় এখানে অ্যালকোহলের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি। তাই সেটা নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন। সেই কারণেই নমুনা ভিসেরা টেস্টের জন্য পাঠানো হচ্ছে।” যদিও প্রসেনজিৎ দাস শনিবার গভীর রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার পারমাদন উত্তরপাড়া গ্রাম থেকে মৃতদেহ সমেত শবযাত্রীদের নিয়ে নবদ্বীপের দিকে যাওয়ার পথে গাড়িটি যে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন, তা প্রায় নিশ্চিত। ওই দুর্ঘটনায় আহতরা অনেকেই এ কথা জানিয়েছেন। যদিও আহতরা প্রসেনজিৎ দাসও যে চূড়ান্ত মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, সেই অভিযোগও করেছিলেন। এদিকে প্রসেনজিৎ দাস যে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, সেটির মালিক উত্তম সরকার কিছুতেই বিশ্বাস করতে রাজি হননি যে চালক মদ্যপ ছিলেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার কমলাপুরের গ্যাড়াপোতা এলাকার বাসিন্দা উত্তম সরকার। তার বাড়ির প্রায় কাছাকাছি বাড়ি প্রসেনজিৎ দাসের। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রসেনজিৎ দাসকে চিনতেন। উত্তম সরকার জানিয়েছেন, “প্রসেনজিৎকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি।ও একটা সময় গাড়ির খালাসি ছিল। এরপর ড্রাইভার হয়েছে। আমি ওকে কখনও, কোনদিনও মদ খেতে দেখিনি। ও আমার সন্তানের মত। আমার চোখের সমস্যা হওয়ার কারণে ওকে আমি গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমার গাড়িটি প্রায় ১৩ বছরের পুরনো। ও ভালভাবেই গাড়িটি চালাত, দেখভাল করত। মদ খাওয়া তো দূরের কথা, ও হয়তো বিড়ি খেত, তবে তা আমার সামনে খেত না। খেলেও লুকিয়ে খেত। তবে এ কথা ঠিক যে ওর গাড়ি একটু জোরে চালানোর অভ্যাস ছিল। আমার ধারণা, দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে হঠাৎ কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই গাড়ির গতি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সেই কারণেই ঘটে গিয়েছে এত বড় দুর্ঘটনা।”
উল্লেখ্য, নভেম্বরের ২৮ তারিখ উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকে একটি মৃতদেহ নিয়ে সৎকার করতে নবদ্বীপে যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। রাত দেড়টা নাগাদ শববাহী গাড়িটি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৭ জনের। জখম হন বেশ কয়েকজন।