অনেকেরই ত্বকে জ্বালা বা চুলকানি শুরু হয়, কোনওরকম জুয়েলারি বা প্রসাধনী সামগ্রী থেকে। তা বলে কি সাজবেন না! সেটা নয়। আগে রোগ সারিয়ে নিলে তারপর সবই করা বা পরা সম্ভব। এ রোগের গোড়া থেকে নির্মূলের কথা শোনালেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. কুণাল ভট্টাচার্য।
প্রসাধনের প্রতি মহিলাদের দুর্বলতা চিরকালীন, কিন্তু আধুনিক যুগে পুরুষরাও কম যায় না। সাজগোজ করে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কে না চায়? কিন্তু মুশকিল হল সকলের সব ধরনের প্রসাধনী সহ্য হয় না। প্রসাধনী থেকেও হতে পারে অ্যালার্জি। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে অ্যালার্জিক কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। যাকে বাগে আনতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজেহাল হয়ে যায়। আশার কথা হল, হোমিপ্যাথিক চিকিৎসায় এর কিছুটা সুরাহা করা সম্ভব।
কাদের ঝুঁকি?
প্রসাধনী অ্যালার্জি কার-কখন-কোন জিনিসে দেখা দেবে তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। কারও ওই নির্দিষ্ট বস্তুটি ব্যবহার করার প্রথম দিনেই, কারও দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে হতে পারে। আবার অনেকে আসেন, যাঁরা ওই জিনিস দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছেন, কিছুই হয় না, কিন্তু একদিন হঠাৎ সেই বস্তুতে তার চামড়ার অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। তবে দেখা গিয়েছে, যাঁদের বংশে কোন নিকট আত্মীয়ের অ্যালার্জির ইতিহাস আছে বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের ইতিহাস আছে তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়।
যে যে প্রসাধনী থেকে সাবধান হবেন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত যে কোনও প্রসাধনী দ্রব্য থেকেই অ্যালার্জি হতে পারে।
শুরু করা যাক নেলপলিশ আর লিপস্টিক দিয়ে।
নেলপালিশে থাকে দুটি ক্ষতিকর উপাদান- সালফোনোমাইড, ফরম্যালডিহাইড রেজিন যা নখ, এমনকী, চোখের পাতাতেও প্রদাহ ঘটায়। আবার নেলপালিশ রিমুভারে থাকে অ্যাসিটোল যা থেকে নখ ক্ষয়ে যেতে পারে।
লিপস্টিকের ডাই, টেট্রা ব্রোমোফ্লোরাসিন ঠোঁটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে চুলের কলপ, আফটার শেভ লোশনে অনেকেরই সমস্যা হয়।
এছাড়াও সিঁদুর, আঠা লাগানো টিকা, ময়েশ্চারাইজার বা পারফিউমও নিরাপদ নয়। এছাড়া পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করানোর পর তা থেকে অ্যালার্জির প্রবণতাও
অনেকেরই থাকে।
আবার মেটাল বা ধাতব জুয়েলারি (যেমন, ইমিটেশন, রুপো, ব্রোঞ্জ, তামা, লোহা বা সোনা) থেকে অনেকে চামড়ায় অ্যালার্জি হয়।
জুতো ও জামাকাপড়ে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন – সিন্থেটিক ও উলের পোশাক, সস্তার রাবার বা প্লাস্টিকের চটি, চশমার ফ্রেম, ঘড়ির স্ট্রাপ থেকেও একই সমস্যা আসতে পারে।
এই ধরনের অ্যালার্জিক কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের র্যাশ বা ব্রনতে কেউ যদি ক্রিম, মলম বা স্টেরয়েড জাতীয় লোশন ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে ক্ষণিকের জন্য উপশম মিললেও এগুলি আবার সমস্যা ডেকে আনে। এই ভাবে নির্মূল হওয়ার বদলে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস থেকে ত্বকে অ্যালার্জি শুরু হয়।
আগেই সাবধান হোন
অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে সাবধানে মেকআপ বাছাই করবেন। সস্তার প্রসাধনী, কাপড় বা জুতো এড়িয়ে চলবেন। প্রসাধনীর এক্সপায়ারি ডেট দেখে নেবেন।
উপযুক্ত কোনও প্রসাধনও ব্যবহারের পর যদি দেখেন অ্যালার্জি হচ্ছে সেক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড কতকগুলি অ্যালার্জেন বস্তু দ্বারা প্যাচ টেস্ট করে দেখা প্রয়োজন কেন বা কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে।
রোগীর পূর্ণ ইতিহাস শুনে (যথা, পেশা, শখ, বাড়িতে তার কি কাজ, কি তেল বা প্রসাধনী ব্যবহার করেন ইত্যাদি) তাঁর কি বস্তু থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে সেটা অনেকটাই বোঝা যায়। সেক্ষেত্রে অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা দরকার। আর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা দরকার।
[আরও পড়ুন: প্রেম থাকুক ৩৬৫ দিন, ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে না হয় একটু বেশি! কীভাবে? রইল টিপস ]
এই সমস্যায় হোমিও দাওয়াই
অ্যালার্জির চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি অদ্বিতীয়, কারণ অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও অ্যালার্জির প্রবণতা পুরোপুরি সারিয়ে তোলার হার খুবই কম। দমিয়ে রাখা যার মাত্র। কিন্তু আমাদের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করালে এক্ষেত্রে ভালো হয়ে যাওয়া বা থাকার সম্ভাবনাটা অনেক বেশি। কারণ হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্র অনুযায়ী প্রসাধনী বস্তু বা অ্যালার্জেনটি নয়, বংশসূত্রে প্রাপ্ত রোগপ্রবণতাই অ্যালার্জি-সহ রোগীর বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। হোমিওপ্যাথি বংশসূত্রে প্রাপ্ত এই রোগপ্রবণতাকেই সমূলে উৎপাটিত করে রোগীকে আরোগ্যের পথে নিয়ে যায়।
সাময়িক উপশমের জন্য কিছু ওষুধের নাম করা যায়। যেমন, বোভিস্টা কসমেটিক অ্যালার্জিতে আমাদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। অ্যালার্জি থেকে চামড়ার জ্বালা করলে তা উপশম দেয় ‘এপিস মেল’, ‘লিডাম পল’, ‘হাইগ্রোফিলা’ প্রভৃতি ওষুধ। এগুলি লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে তাৎক্ষনিক আরাম দেবে। আর জ্বালা ভাবটা গরমে উপশম হলে ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম’ একডোজ অনেক ক্ষেত্রেই ভালো কাজ দেয়। যাদের উলের পোশাক সহ্য হয় না তাঁদের ‘হিপার সালফার’ উপকারী।
তবে সবক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চলা দরকার। কারণ সম্পূর্ণ আরোগ্যের জন্য আপনার সম্পূর্ণ কেস-হিস্ট্রি নিয়ে যে ধাতুগত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্ধারণ করতে হবে, তা একমাত্র একজন চিকিৎসকই করতে পারেন। সুতরাং, কসমেটিকস থেকে মুখ বা ত্বক খারাপ হয়ে গেলে মন খারাপ করবেন না। হোমিওপ্যাথিই পারবে আপনার হৃত সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার করতে।
ফোন – ৯৮৩১৪২১৬৯৬