স্টাফ রিপোর্টার: রক্তে মারণ রোগ। কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট নয়। তাই নিয়ম করে রক্ত নিতে হয় না। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে রাজ্য থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কাছে। থ্যালাসেমিক কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১০-১৫ শতাংশ থ্যালাসেমিয়া বাহক। আবার মোট সংগৃহীত রক্তের ৪০ শতাংশ দরকার হয় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য। ক্রমশ এই চাহিদা বাড়ছে। আর চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা বেশি। রাজ্যে থ্যালাসেমিক রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। যাঁদের নির্দিষ্ট সময়ান্তরে রক্ত নিতে হয়। স্টেট ব্লাড সেল, মেডিক্যাল কলেজ ও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ রাজ্যের বিভিন্ন অংশের থ্যালাসেমিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক তথ্য স্বাস্থ্য ভবনে এসেছে। আর সেই তথ্যে চোখ রেখেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উত্তরবঙ্গে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারে সিকেল সেল আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
[আরও পড়ুন: একশো দিনের প্রকল্পে এবার মাদুরশিল্প! মেদিনীপুর সফরে ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী]
কয়েকদিন আগেই মেডিক্যাল কলেজ, ঝাড়গ্রাম ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এইচপিএলসি (হিমোগ্লোবিন ইল্কেট্রোপোরেসিক কোমাটোলজি)যন্ত্র বসানো হয়েছে। রক্ত পরীক্ষা করে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি বাহক কি না? এখন প্রশ্ন, কেন উত্তরবঙ্গে তুলনামূলকভাবে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা বেশি। রাজ্যের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল প্রোগ্রাম যে তথ্য হাতে পেয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, কয়েকটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাহকের সংখ্যা বেশি। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. রাজীব দে অথবা স্টেট ব্লাড সেলের নোডাল অফিসার ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদারের কথায়, ঘটনা হল উত্তরবঙ্গে ‘ই থ্যালাসেমিয়া’ বাহকের সংখ্যা বেশি। যদিও ‘ই-থ্যালাসেমিয়া বা ই-ডিজিজ’ অর্থাৎ রক্তে রোগ থাকলেও লক্ষণ স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ এই ধরনের থ্যলাসেমিয়া আক্রান্তদের মধ্যে লক্ষণ স্পষ্ট নয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তাঁদের রক্ত নিতে হয় না। কিন্তু এই বাহকদের সঙ্গে যখন থ্যালাসেমিয়া ‘বিটা’র বাহকের বিয়ে হয়। তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।
ঘটনা হল, উত্তরবঙ্গে ‘ই-থ্যালাসেমিয়া’র জনসংখ্যা বেশি। এবং এই বাহকদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। ডা. রাজীব দে-র কথায়, “একই পরিবার বা আত্মীয়র মধ্যে বিয়ে এবং তাঁদের সন্তানদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ফি মাসে রাজ্যের সব জেলা থেকে ব্লকভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করছে। সেখানেও এই প্রবণতা স্পষ্ট। রাজ্যে ৩৬ থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট চালু হয়েছে। কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজে এবং মানিকতলা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কেও শুরু হয়েছে ডে কেয়ার। যেখানে রক্ত নেওয়ার পর সমস্যা হলে চিকিৎসা সম্ভব।