তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: অভিযোগ, বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ, সঙ্গে সঙ্গে নজিরবিহীন কড়া পদক্ষেপ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ১২ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল। এই ১২ জনের মধ্যে তিনজন গ্রুপ-এ অফিসার, তিনজন হাউস স্টাফ, একজন ইন্টার্ন ও পাঁচজন ছাত্র রয়েছেন। পাঁচ ছাত্রকে ‘ডিস-কলেজিয়েট’ করা হয়েছে। তাঁরা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা থেকে শুরু করে আর কোনও বিষয়ে অংশ নিতে পারবেন না। ইতিমধ্যে হস্টেল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সূত্র জানা গিয়েছে, এক ইন্টার্নকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। হাউস স্টাফদের থেকে পরিষেবা নেওয়া বন্ধ অর্থাৎ 'টারমিনেট' করে দেওয়া হয়েছে। হাউস স্টাফ ও ইন্টার্নদের বিষয়টি ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানানো হবে। তাদের আগামীতে লাইসেন্স দেওয়া হবে কিনা, তা ঠিক করবে মেডিক্যাল কাউন্সিল। বাকি গ্রুপ-এ অফিসারদের ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিষয়টি রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। যে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার পদত্যাগের দাবিতে স্বাস্থ্যভবন অভিযানে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তার আগে অবশ্য সোমবার তদন্ত কমিটি কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই সকল রিপোর্ট দেখার পরেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “আমাদের কলেজ কাউন্সিলে সমস্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পর আমরা এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি। সমস্ত বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
[আরও পড়ুন: ‘শিরদাঁড়া’ নিয়ে গিয়েছিলেন লালবাজার, এবার ‘মস্তিষ্ক’ হাতে স্বাস্থ্যভবন অভিযানে জুনিয়র ডাক্তাররা]
দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অন্দরে টিএমসিপির কয়েকজন ছাত্রছাত্রী নিরন্তর অন্যদের হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের কথা না শুনলে কলেজ থেকে বহিষ্কার করানোর পাশাপাশি পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। আরও ঢের অভিযোগে রীতিমতো জেরবার হচ্ছিল কর্তৃপক্ষ। গত ৪ সেপ্টেম্বর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও ডিনকে আটকে রেখে আন্দোলনে শামিল হন পড়ুয়ারা। চাপের মুখে পড়ে রাতেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত ও সহকারী ডিন সুদীপ্ত শীল। এর পরেই হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়ে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ। সেইমতো সোমবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে রিপোর্ট পেশ করে তদন্ত কমিটি। রিপোর্টে বেশিরভাগ অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হয়।
[আরও পড়ুন: থ্রেট কালচার, সিন্ডিকেট! ৫১ ডাক্তারকে ‘অকর্মণ্য’ করার সিদ্ধান্ত আর জি কর কর্তৃপক্ষের]
তার পর তিন হাউস স্টাফ - শাহিন সরকার, সাহিনুল ইসলাম, ঋতুরম্ভ সরকার, ইন্টার্ন সোহম মণ্ডল ও পাঁচ পড়ুয়া জয় লাকড়া, তীর্থঙ্কর রায়, ঐশী চক্রবর্তী, সৃজা কর্মকার, অরিত্র রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যদিও পড়ুয়া, জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, কলেজের অধ্যক্ষের উপস্থিতিতেও একাধিক দুর্নীতি হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিছুই জানতেন না, তা হতে পারে না। তাই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। তাঁদের যুক্তি কার্যত উড়িয়ে দিতে পারেননি স্বয়ং অধ্যক্ষ। তাঁর কথায়, “ছাত্রছাত্রীরা যে সকল অভিযোগপত্র আমাদের কাছে জমা করেছেন, তার সবটাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। সেখানে কোনও অভিযোগপত্রে আমার নাম থাকলে সেটাও পাঠানো হবে।”