নব্যেন্দু হাজরা: জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া। টিকিট বিক্রি করেও সেই খরচ উঠছে না বলে দাবি বাস মালিকদের। আর তাই সমস্ত রুটেই কমছে সরকারি-বেসরকারি বাস। যার জেরে ভোগান্তির শিকার নিত্যযাত্রীরা। এধরনের অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সমস্ত রুটের বাস সংগঠনকে চিঠি দিল আরটিও (RTO)-রা। জানতে চাওয়া হল, “কোন রুটে কত বাস চলছে? কেন রাস্তায় নামছে বহু বাস?” এ নিয়ে পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা বৈঠকে বসছেন বলেও খবর।
পরিস্থিতি যা, আগামী সপ্তাহ থেকে বেসরকারির পাশাপাশি সরকারি বাসের সংখ্যাও অনেকটাই কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্তত পরিবহণ দপ্তর সূত্রে তেমনই খবর। এমনিতেই যে সমস্ত রুটে যাত্রী চাহিদা কম, সেগুলোতে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। বাস কম চলছে দুপুর এবং রাতের দিকে। কিন্তু আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দপ্তরের কর্তারা। কারণ তাঁদের দাবি, শুধু টিকিট বিক্রি থেকে তেল কেনার টাকার জোগান হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: ‘সময় এলে জোট নিয়ে পদক্ষেপ, এখন শক্তি বাড়াবে দল’, ‘জাগো বাংলা’য় অবস্থান স্পষ্ট করল তৃণমূল]
পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, শহরের রাস্তায় সরকারি বাসের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখন সিএসটিসি-র প্রথম ট্রিপে বাস নামছে ৪০০। কিন্তু দ্বিতীয় ট্রিপে যা কমে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। আগে প্রথম ট্রিপে বাস নামতো পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচশো। সিটিসির অবস্থা আরও খারাপ। মাত্র একশো থেকে একশো দশ বাস নামছে প্রথম ট্রিপে। দ্বিতীয় ট্রিপে তা আরও কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।
কিন্তু কেন এই অবস্থা। পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, বছর কয়েক আগেই সরকার জানিয়েছে, কর্মীদের বেতন থেকে অন্যান্য খরচ নিগম করলেও গাড়ির তেলের টাকা টিকিট সেল থেকে তুলতে হবে। বছর দেড়েক আগেও পরিস্থিতি ঠিক ছিল। কিন্তু করোনাকালের পরই তা বদলে যায়। সূত্রের খবর, আগে টিকিট বিক্রি থেকে সিএসটিসি-র সোম থেকে শুক্রবার দিনে আয় হত ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। তা এখন কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। মেরেকেটে ১৪-১৫ লক্ষ। শনি ও রবিবার আরও কম। আট লক্ষ মতো। আর উলটোদিকে তেলের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
[আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ড থেকে কফিনবন্দি ৫ বাঙালির দেহ ফিরল শহরে, চোখের জলে শেষ বিদায়]
পরিবহণনিগমসূত্রে খবর, একেকটি ডিপোকে সপ্তাহপিছু এক ট্যাঙ্কার তেল দেওয়া হয়। একটি ট্যাঙ্কারে ১২০০০ লিটার তেল থাকে। যার দাম বছর দেড়েক আগে ছিল আট থেকে সাড়ে আট লক্ষ টাকা মতো। আর এখন সেই দামই বেড়ে হয়ে গিয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহে একটা ডিপোপিছু যে এক ট্যাঙ্কার তেল তাতেই খরচ বেড়ে গিয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার কাছাকাছি। আর আয় কমে হয়েছে অর্দ্ধেক। তাতেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকছে না।
পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তা জানান, সিএসটিসির ১১ টি এবং সিটিসি-র ১২টি ডিপো রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক সপ্তাহে ২৩ ট্যাঙ্কার তেল লাগে। কিন্তু যে টাকা রোজগার হচ্ছে যাত্রী পরিবহণ করে তা দিয়ে দশ ট্যাঙ্কারের বেশি তেল কেনা সম্ভব নয়। যে কারণে পরের সপ্তাহ থেকে রাস্তায় বাস নামায় পড়তে পারে কোপ। একাধিক ডিপো থেকে বাস বেরনো বন্ধও হতে পারে। নিগম কর্তাদের বক্তব্য, তেলের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু যাত্রী কমে যাওয়ায় রোজগার বাড়ার বদলে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।