shono
Advertisement

রেড রোডে মমতার এবারের শপথ কেন ঐতিহাসিক?

এই রোড রোডে নতুন রাজ্য মন্ত্রিসভার শপথ নিয়ে ইতিমধ্যে কারও কারও ভ্রূকুঞ্চন হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে কলকাতার রাজভবনের বাইরে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভাঙা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথা৷ 
Posted: 02:42 PM May 22, 2016Updated: 09:12 AM May 22, 2016

বিশ্বজিৎ সিংহ: রেড রোড৷
এ বছর ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ মে এক তাৎপর্যপূর্ণ বৃত্ত পূর্ণ করছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ চার মাস আগে এখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা উদ্বোধন করেছিলেন খাদ্যসাথী প্রকল্পের৷ ফলে দু’টাকা কেজি দরে চাল পৌঁছেছে রাজ্যবাসীর ঘরে৷ এই কাজ পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব৷ আর এবার ভোটে হরেক বাধা সত্ত্বেও তাঁকে সমর্থন দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের জনগণ৷
রেড রোড৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক লড়াইয়ের দীর্ঘ পথেও এক মাইলস্টোন৷ ২৩ বছর আগে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই তাঁর ‘মহাকরণ অভিযান’ আন্দোলনের সময় বসু-বুদ্ধ সরকারের নির্দেশে পুলিশি বর্বরতায় ১৪ জনের প্রাণ গিয়েছিল৷ মৃতদেহ পড়েছিল মহাকরণ থেকে বহুদূরে, এই রেড রোডের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে৷
সেই ঐতিহাসিক রেড রোডেই দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা৷ স্বাধীনতার পরও রাজ্যের প্রায় সবক’টি মন্ত্রিসভার শপথ পর্ব হয়েছে রাজভবনে৷ তবে এবার নতুন সরকার গঠন ঘিরে যে স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে, তার আঁচ পেয়েই রেড রোডে শপথগ্রহণ করতে চেয়েছেন মমতা৷ তাঁর ইচ্ছা, জনগণের সরকারের শপথ আরও বেশি বেশি সংখ্যায় স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পান রাজ্যের জনতা৷
এই রোড রোডে নতুন রাজ্য মন্ত্রিসভার শপথ নিয়ে ইতিমধ্যে কারও কারও ভ্রূকুঞ্চন হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে কলকাতার রাজভবনের বাইরে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভাঙা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথা৷
বাস্তব হল, এই প্রথম শপথে আমলাতান্ত্রিক ঘেরাটোপের বাইরে আসতে পারল রাজ্য৷ বহুদিন আগেই দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেই রাজভবনের বাইরে শপথ অনুষ্ঠান করার চল রয়েছে৷ ১৯৬০ সালে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই বি চবন শপথ নিয়েছিলেন মুম্বইয়ে মন্ত্রণালয়ের মোড়ে৷ এখনকার মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশও শপথ নিয়েছেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে৷ সোশ্যালিস্ট পার্টির মুলায়ম সিং যাদব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন লখনউয়ের গোমতী নদীর তীরে৷ পাটনায় গান্ধী ময়দানে শপথ নিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী আরজেডির লালুপ্রসাদ যাদব যে পথ দেখিয়েছিলেন, তা বজায় রেখেছেন পরবর্তীকালে জেডিইউয়ের নীতীশকুমারও৷ এরকম নজির দেশজুড়ে অজস্র৷
তর্ক উঠলেও বলা ভাল, পশ্চিমবঙ্গ পুরনো নিয়মনীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি রক্ষণশীল রাজ্য৷ এককথায় অতীতচারী৷ তাই জনতার আহ্বান শুনে উচ্চশ্রেণির তৈরি প্রশাসনিক ধারা অবলীলায় ভেঙে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছেন মমতা৷ পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের শপথ নেওয়ার সুযোগ এসেছে এ পর্যন্ত কার্যত ২০ বার৷ এরমধ্যে ১৯ বারই অনুষ্ঠান হয়েছে কলকাতার রাজভবনে৷ ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় প্রথমবার প্রথায় ছেদ পড়ে৷ সে বার শপথ অনুষ্ঠান হয়েছিল রাজভবনের পশ্চিম প্রাঙ্গণে রীতিমতো ম্যারাপ বেঁধে৷ রাজ্যপাল ছিলেন অ্যান্টনি ল্যান্সলট ডায়াস, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু৷ একমাত্র ব্যতিক্রমী ঘটনাটি ৫৯ বছর আগের, ১৯৫৭ সালে ২৬ এপ্রিল৷ মাত্র পাঁচমাস আগে পশ্চিমবঙ্গে আসা রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে৷ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি হয়েছিল দার্জিলিং রাজভবনের দরবার হলে৷ সে বার বিধানসভা নির্বাচনে নিজের জয় নিশ্চিত করতে বিধানচন্দ্র স্বয়ং দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের দুটি কেন্দ্রে৷ কংগ্রেসের অন্দরে ছিল তুমুল অন্তর্দ্বন্দ্ব৷ মন্ত্রী হওয়ার জন্য লাফালাফি৷ এসব এড়াতেই দার্জিলিঙে গিয়ে নিভৃতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অতুল্য ঘোষ ও মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় অনেক কাটাছেঁড়ার পর ভাবী মন্ত্রিসভার তালিকা তৈরি করেন৷ দার্জিলিঙে শপথপর্ব আরও একটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে যায়৷ বিধানচন্দ্রের এই মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন, অজয় মুখোপাধ্যায় ও সিার্থশঙ্কর রায়৷ এই তিনজনই হয়েছিলেন পরবর্তীকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement