সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেট ভুবনে সংক্রমণের হার বড় বিপজ্জনক রকমের বেশি! কত কিছুই যে ভাইরাল হয়ে যায় নিমেষে। আবার হারিয়েও যায় দ্রুত। কিন্তু যতক্ষণ তা ভাইরাল, ততক্ষণ তা ফিরে ফিরে আসতে থাকে ফিডে। রাজুদা বা ডিজে অরুণের পরোটা নিয়ে কদিন খুব শোরগোল হল। এবার ভাসতে শুরু করেছে একটা গান। 'ছি ছি রে ননী'। ওড়িয়া গান, তাও কুড়ি বছর আগের এই গান শুনে এই মুহূর্তে 'পাগল' হয়ে যাচ্ছেন নেটিজেনরা। কিন্তু কেন? কী এমন আছে এই গানে?
তা বলা অবশ্য কঠিন। বোধহয় আলাদা করে কোনও তাৎপর্য খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। 'কাঁচা বাদাম' গানের লিরিক্স অথবা গায়কীতে (যদি ওই সুরেলা অভিব্যক্তিকে আদৌ গান বলা যায়) আলাদা করে কোন দুরন্ত বৈশিষ্ট্য ছিল ভাইরাল হওয়ার মতো? সেদিক থেকে দেখলে ননীর প্রেমিকের আকুতি বেশ সুরেলা। ফলে তা মন জিতে নেওয়ায় আশ্চর্যের কিছুই নেই। তাই গানটির ভিডিও তো বটেই বিশ্বজয়ী কোহলিদের নাচেও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে 'ধনকে দেখিলু তুই ননী সিনা মনকে চিনলু নাই, সুনাকে চিনলু বানাকে চিনলু মনিষো চিনলু নাই...'
কী এই গানের অর্থ? এককথায় বললে এই গান আসলে এক আহত প্রেমিকের হাহাকার। সেই যে পিবি শেলি লিখেছিলেন 'আওয়ার সুইটেস্ট সংস আর দোজ দ্যাট টেল অফ স্যাডেস্ট'। সেই মন্ত্র এখানেও খেটে যায়। যন্ত্রণায় কাতর এক প্রেমিক দোষারোপ করছেন প্রেমিকা ননীকে। বলছেন, ''ধনসম্পদই কেবল দেখলে ননী, মনকে চিনলে না? সোনাদানা চিনলে, মানুষ চিনলে না?'' আসলে কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়েছিল ওই প্রেমিককে। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন ননীর বিয়ে হচ্ছে অন্যত্র। ভগ্ন হৃদয়ে হাহাকার করছেন তিনি। তবে কোনও বিরাট রূপক বা গায়কীতে কোনও মোক্ষম গিঁটকিরির প্রয়োগ নয়, বরং এক সারল্য ছড়িয়ে রয়েছে গানটিতে। আর সেটাই হয়তো গানটি সকলের ভালো লেগে যাওয়ার কারণ। এদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে এই হাহাকার হয়তো অনেকেরই মনের কথা। তাই 'ক্যাথারসিস' ঘটে যায় সহজেই। অ্যারিস্টটল তাঁর 'পোয়েটিক্স' নামের বইয়ে জানিয়েছিলেন, কীভাবে ট্র্যাজেডি দর্শকদের মধ্যে করুণা ও ভয়ের আবেগ তৈরি করতে পারে। সেই নির্মাণ যতই নিখুঁত হয় ততই দ্রুত তা সংযোগ তৈরি করতে পারে। এই ক্যাথারসিস এখানে অনেকের মধ্যেই ঘটে যায়।
২০০৫ সালে প্রথমবার এই গানটির মিউজিক ভিডিও তৈরি করা হয়। যদিও তা রেকর্ড হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। মিউজিক ভিডিও পরিচালনা করেছিলেন মানবভঞ্জন নায়েক। ভিডিওটির প্রযোজক ও গানটির রচয়িতা সীতারাম আগরওয়াল। গেয়েছিলেন সত্যনারায়ণ অধিকারী। পর্দায় দেখা গিয়েছে বিভূতি বিশ্বালকে। মঞ্চশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান ওই অভিনেতাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। কে জানত, দুই দশক পরে আচমকাই ভাইরাল হয়ে যাবে গানটি। 'স্যাড সং' হলেও লোকে কোমরও দুলিয়ে ফেলছে গানটিতে। আমোদের জোয়ারে ইউটিউবে ভিউ ছাড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ! নতুন বছরে সকলের ফোনে বা অন্য ডিভাইসে বাজছে, বেজেই চলেছে 'ছি ছি রে ননী'...