সুমন করাতি, আরামবাগ: “আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনও ভেদাভেদ নাই! বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) বহুদিন আগেই নারীর সাম্যের কথা এ ভাবেই লিখেছেন। তার পর থেকে আজকের সমাজে এসেছে অনেক পরিবর্তন। পর্দার আড়াল থেকে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন মেয়েরা। এখন বলা যায় পুরুষদের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই তাঁরা। তবে আজও কিছু ক্ষেত্রে কোথাও যেন একটা বাধা রয়েছে। কিছু কিছু জিনিস যেন পুরুষদের জন্যই। সেগুলো নিয়ে খুব একটা প্রতিবাদ বা প্রথা ভাঙার বাড়াবাড়িও দেখা যায় না সমাজে। এবার নিঃশব্দে সেই কাজটাই করলেন হুগলির আরামবাগের শিক্ষিকা অনিতা মুখোপাধ্যায়। সব প্রথা মেনে উপবীত হলেন তিনি।
আরামবাগের (Arambag) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিক্ষিতা অনিতা। ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ছোট থেকেই বাড়িতে পুজো-অর্চনা পালন করতে দেখেছেন। সব নিময় পালনের নিষ্ঠাও তাঁর মধ্যে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। বাবা-কাকাদের দেখেছেন পৈতে ধারণ করতে। তাঁরও উপবতী হওয়ার ইচ্ছে সেই মেয়েবেলা থেকেই। কিন্তু পৈতে তো নিতে পারেন শুধু ছেলেরা। মেয়েদের বারণ। সেই ইচ্ছা নিজের মন থেকে মুছে ফেলেননি। আজ সমাজে মেয়েরা সর্ব ক্ষেত্রে নিজেদের ছাপ রাখছেন। তিনিও এগিয়েছেন নিজের ইচ্ছে পূরণের পথে। বেশ কিছু বছর ধরে দুর্গাপুজো , বিবাহরের মতো পুরুষালী কাজ সামলেছেন। এবার উপবীত হলেন এই শিক্ষিকা। ধর্মীয় সব রীতিনীতি মেনে বাড়িতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৈতে ধারণ করলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: বাবাকে গুলি করে খুনের ছক ছেলের! বহরমপুরে গুরুতর আহত ব্যক্তি]
উল্লেখ্য, বৈদিক যুগে গার্গিল, রুপা মুদ্রারা এই বিভেদের গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ দূর করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ধরনের কাজ থেকেই মহিলাদেরকে দূরের রাখা হয়। সেক্ষেত্রে এক বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন আরামবাগের অনিতাদেবী। এ বিষয়ে শিক্ষিতা অনিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “উপনয়নের মাধ্যমে আমরা যে প্রতিষ্ঠিত হব সেটাই মূল লক্ষ্য। আমি যেহেতু ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে তাই ছোট থেকেই চণ্ডীপাঠ, গীতা-সহ পুজো-অর্চনা প্রথম থেকে আমাদের বাড়িতে ছিল। প্রথম থেকে ইচ্ছা ছিল পৈতে ধারণ করা। তাই বাধা কাটিয়ে পৈতে ধারণ করেছি।”