সুমন করাতি, হুগলি: প্লাস্টিকেই পরিবেশে বাড়ছে বিপদ। প্রতিদিনের ব্যবহারে প্লাস্টিক এড়ানো কঠিন। আর সেই পরিস্থিতি এড়াতে এবার অন্যরকম উদ্যোগ নিল ভদ্রেশ্বর পুরসভা। প্লাস্টিকের বদলে মিলবে খাবার! তাও আবার মা ক্যান্টিন থেকে। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে পুরসভার তরফে করা হচ্ছে প্রচার। যেখানে বলা হয়েছে, এক কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক দিয়ে দুটি খাবারের কুপন এবং দু'কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক দিয়ে পাঁচটি খাবারের কুপন দেওয়া হবে। এজন্য কোনও টাকা নেওয়া হবে না। পুর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভদ্রেশ্বর পালবাগানে পুরসভার লজে প্রত্যেকদিন মা ক্যান্টিন থেকে এই খাবার দেওয়া হয়। সেখানেই প্লাস্টিকের বিনিময়ে এই খাবার দেওয়া হবে।
প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাবার নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল কর্মকার বলেন, ''শহর পরিস্কার রাখতে খুবই ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পাঁচ টাকার বিনিময়ে মা ক্যান্টিন থেকে যারা খাবার পেয়ে থাকি, তাঁদের জন্য খুবই সুবিধার। প্লাস্টিক জমা দিয়ে বিনা পয়সাতে খাবার পাওয়া যাবে।'' গোপালবাবুর কথায়, ''এটা প্রত্যেকের করণীয় রাস্তায় বা ড্রেনে প্লাস্টিক না ফেলে একটা নিদিষ্ট জায়গায় জমা করা।'' প্রত্যেকদিনই মা ক্যান্টিন থেকে খাবার নেন স্থানীয় আরও এক বাসিন্দা বিমল রায়।
তিনি বলেন, ''পরিবেশ দূষণমুক্ত করার জন্য সুন্দর উদ্যোগ করেছে ভদ্রেশ্বর পুরসভা। দু'কিলো প্লাস্টিক নিয়ে এসেছি, পাঁচটা কুপন পেয়েছি।'' আগামীদিনে এভাবে যাতে সবাই সাহায্য পায়, সেই আবেদন রেখেছেন বিমল রায়। তাঁর কথায়, ''যাঁদের কাছে টাকা নেই, তাঁরা প্লাস্টিক নিয়ে আসলে একদিকে যেমন খাবার পাবেন, তেমনই শহর সুন্দর থাকবে।''
বস্তায় করে প্লাস্টিক ভরে নিয়ে আসছেন অনেকেই।
অন্যদিকে এহেন অভিনব উদ্যোগ নিয়ে ভদ্রেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রলয় চক্রবর্তী বলেন, ''মা ক্যান্টিন গত তিন বছর ধরে চলছে। গৃহহীন কিংবা ক্যান্সার রোগীদের প্রত্যেকদিনই বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। এবার বর্জ্য প্লাস্টিকের বিনিময়ে বিনামূল্যে খাবারের কুপন দেওয়া হবে।'' তাঁর কথায়, ভদ্রেশ্বর শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে লোক রয়েছে। কিন্তু এটি নতুন স্কিম বলেই দাবি পুর চেয়ারম্যানের। তিনি বলেন, ''মা ক্যান্টিনে পাঁচ টাকার বিনিময়ে ডিম, ভাত এবং সোয়াবিনের তরকারি দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা টাকা দিতে পারছেন না, তাদের জন্য পুরসভার তরফে একটি স্কিম চালু করা হয়েছে। যেখানে পাঁচশো বর্জ্য প্লাস্টিক দিলেই একটি করে খাবারের কুপন দেওয়া হবে।''
বস্তায় করে রাখা রয়েছে প্লাস্টিক।
ভদ্রেশ্বরে জুটমিল কলোনি-সহ বিভিন্ন বস্তি এলাকা রয়েছে। বহু মানুষ রাস্তাঘাটে ও বাড়ির পাশে যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলে দেওয়া হয়। নিয়ম করে প্রত্যেকদিন আবর্জনা পরিস্কার করা হলেও অনেক সময়েই তা পড়ে থাকে। যা নিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পুরসভাকে। সেদিকে তাকিয়েই এহেন উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এতে শহর যেমন পরিস্কার থাকবে, তেমনই বিনামূল্যে খাবার পাওয়ারও সুবিধা সাধারণ মানুষ আরও বেশি করে পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
