সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার মানুষ জানেন ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কাহিনি। ‘মৃত্যু’র এক দশক পরে ঘরে ফিরেছিলেন ভাওয়ালের রাজকুমার। রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ই যে তিনি, প্রমাণ করতে মামলা উঠেছিল আদালতে। চমকে দেওয়া সেই ঘটনা নিয়ে পরবর্তীকালে বাংলা ছবি তৈরি হয়েছিল। ভাওয়াল সন্ন্যাসীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) একটি সাম্প্রতিক ঘটনা ভাওয়াল সন্ন্যাসীর সেই কাহিনিকে মনে করাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়েছে পরিবার। হারানো ছেলে সেজে মাকে প্রতারণা করলেন এক ব্যক্তি। ঘরে ফেরা ‘সন্ন্যাসী’ যে ভুয়ো, কদিন কেটে যাওয়ার পর টের পেলেন দম্পতি।
গত কিছু দিন হল সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে রতিপাল সিং এবং তাঁর ছেলে পিঙ্কুর কাহিনি। ২০০২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিল পিঙ্কু। খেলাধুলা নিয়ে বাবা-মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে বাড়ি ছেড়েছিল সে। হাজার খুঁজেও ছেলেকে পায়নি সিং পরিবার। ২২ বছর পর সেই ছেলেই ঘরে ফিরেছিল! প্রায় দুই দশক পর উত্তরপ্রদেশের অমেঠি জেলায় দেখা মেলে হারানো পিঙ্কুর। গ্রামে গিয়ে নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে মায়ের খোঁজ করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘ধর্ষক’কে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ! জলের ট্যাঙ্কে উঠে প্রতিবাদ দলিত নির্যাতিতার]
সেই সময় গ্রামে ছিলেন না সিং দম্পতি। তবে খবর পাওয়া মাত্র দিল্লি (Delhi) থেকে গ্রামে ফেরেন তাঁরা। মায়ের সঙ্গে দেখা হলে তাঁর কাছে ভিক্ষা চান সাধুবেশী পুত্র। ছেলের চেহারায় একটি দাগ দেখে তাঁকে চিনতে পারেন মা। যদিও ছেলেকে ধরে রাখতে পারেননি। ভিক্ষা নিয়ে ফিরে যান তিনি। ভিক্ষা কেমন ছিল? গ্রামবাসীরা পিঙ্কুকে ভিক্ষা হিসাবে ১৩ কুইন্টাল খাদ্যশস্য দান করেন। এছাড়াও হারানো ভাইপোকে ফিরে পেয়ে আবেগ বিহ্বল পিসি ১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন। যদিও ১ ফেব্রুয়ারি মঠে ফিরে যান পিঙ্কু নামধারী ওই যুবক।
যদিও এর পর ঘটনা অন্যদিকে বাঁক নেয়। পিঙ্কু বাবাকে ফোন করে জানান, তিনি বাড়ি ফিরতে চান। তবে যে ধর্মীয় সংগঠনের আশ্রমে থাকেন, তারা তাঁকে ফেরানোর জন্য ১১ লক্ষ টাকা দাবি করছে। ওই টাকা দিলেই ঘরে ফিরতে পারবেন। একথা শুনে মায়ের মন কেঁদে উঠলেও রতিবাল সিংয়ের সন্দেহ হয়। তথাপি স্ত্রীর জোরাজুরিতে জমি বিক্রি করে ১১ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করেন তিনি। পরের ধাপে রতিপালের কাছে প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ রতিপাল টাকা দিতে মঠে যেতে চাইলে বারণ করেন পিঙ্কু। জানান, নগদে নয়, টাকা পাঠাতে হবে অনলাইন মাধ্যমে। এর জন্য যুক্তিও দেন তিনি। যদিও সেই যুক্তি রতিপালের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তার পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।
[আরও পড়ুন: বিয়ে করে প্রতারিত যোগীরাজ্যের ‘লেডি সিংহম’!, ‘ভুয়ো’ আইআরএস অফিসারকে বিবাহবিচ্ছেদ]
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ভুয়ো পিঙ্কু আসলে সিং পরিবারকে প্রতারণা করেছেন। তিনি আদৌ হারানো সন্তান নন। ঝাড়খণ্ডের যে মঠের কথা বলা হয়েছিল সেটিও ভুয়ো। অভিযুক্তের নাম নাফিস। উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, নাফিস এবং তাঁর ভাই রাশিদ এভাবে প্রতারণা করে থাকেন। ২০২১ সালে সন্ন্যাসী সেজে একটি পরিবারের থেকে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করেছিলেন রাশিদ। যদিও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।