শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: এ যেন বাস্তবের ‘হম দিল দে চুকে সনম’। স্ত্রীর প্রেমেই সিলমোহর দিলেন স্বামী! রীতিমতো দশজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে স্ট্যাম্পপেপারে লিখিত চুক্তি করে, প্রেমিকের হাতে তুলে দিলেন স্ত্রীকে। পাঁচ বছরের স্ত্রীর এক বছরের প্রেমকে স্বীকৃতি দিয়ে নজির রাখলেন জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ধূপগুড়ির যুবক।
তবে স্ট্যাম্পপেপারে স্বাক্ষর করা চুক্তি অনুসারে, বছর তিনেকের শিশু সন্তানকে স্বামীর কাছে রেখেই প্রেমিকের (Lover) সঙ্গে নতুন সংসার পাতলেন যুবতী বধূ। গত সাত বছর ধরে প্রেম, বিয়ে, স্ত্রী, সন্তান-সহ সংসার করার পর এভাবে চুক্তি করে প্রেমিকের হাতে স্ত্রীকে তুলে দিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজেও ভেঙে পড়েছেন। তবে প্রেম বা স্ত্রী হারানো পরাজিত একজনের বদলে ভালোবাসার চিরচেনা ফর্মুলায় অন্যের খুশিতে আনন্দই খুঁজে পেয়েছেন বলে জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ”যাকে ঘিরে প্রেম থেকে দাম্পত্য – সে নিজেই যখন থাকতে চাইছে না, তখন সমস্যা বাড়িয়ে কী হবে? আমি চিরকাল ওকে ভালো রাখতে চেয়েছি। যদি সেটা এভাবে হয় তাহলে সেটাই না হয় হোক।”
[আরও পড়ুন: আমির খানের মেয়ে ইরার রিসেপশনে গিয়েও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি কঙ্গনার, তারপর?]
এই ত্রিকোণ প্রেমের তিন চরিত্রই ধূপগুড়ি (Dhupguri) রেল স্টেশন সংলগ্ন বারোঘড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের ভেমটিয়া এলাকায় বাসিন্দা। গল্পের শুরুটা অবশ্য বছর পাঁচেক আগে। শিলিগুড়ি সংলগ্ন বাতাসী এলাকার যুবতীর সঙ্গে বছর দুয়েকের প্রেমের সুবাদে পালিয়ে বিয়ে সংসার পাতেন পেশায় টোটোর (Toto) মেকানিক ভেমটিয়ার যুবক। তিন চাকার ব্যাটারিচালিত যানের ছোট-বড় সব সমস্যা যার নখদর্পণে সেই তিনিই ঘুণাক্ষরেও টের পাননি একদা প্রেমিকা তথা ঘরণির মনের কথা। এই ফাঁকে বছর খানেক যাবৎ সেই মনে পাকাপাকি ভাবে বাসা বেঁধেছিল এলাকারই আরেক যুবক। ছোটখাটো ব্যবসা করার ফাঁকে তরুণী বধূর সঙ্গে জমে উঠেছিল তাঁর প্রেম। মেলামেশা গভীরতর হলেও এদ্দিন টের পাননি কেউই।
[আরও পড়ুন: শেষমেশ ‘প্রেমিকের’ পরিচয় ফাঁস করলেন কঙ্গনা! আদিত্য-হৃতিকের পর এখানেও মান-অভিমান?]
গোল বাঁধে ঘন কুয়াশার আড়ালে গভীর রাতে অভিসারে আসা প্রেমিককে বধূর পরিবারের লোকেরা দেখে ফেলায়। জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে মন দেওয়ানেওয়ার পুরো ঘটনাই। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বধূর বাপের বাড়ির লোকেরাও। যুবক স্বামী স্পষ্ট জানিয়ে দেন টানা সাত বছরের সম্পর্কেই থাকতে চান তিনি। তবে বেঁকে বসেন বধূ। দাম্পত্য এবং প্রেমের টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর ইচ্ছেতেই মত দেন যুবক। দুই পরিবার এবং এলাকার বর্ষীয়ান সদস্যদের উপস্থিতিতে স্ট্যাম্পপেপারে চুক্তি করে স্ত্রীকে প্রেমিক যুবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
রবিবার কাছাকাছি একটি মন্দিরে বিয়ে করে নতুন সংসারযাত্রা শুরু করে দুজনে। মেয়ের সিদ্ধান্তে সায় নেই বলেই জোরালো দাবি করেছেন বধূর বাবা-মা। সংসার ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গ ঘর বাঁধা নিয়ে বধূ বলেন, ”হঠাৎ করে কিছু হয়নি। এক বছর ধরে আমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসি। মন যখন আমার তখন সিদ্ধান্তও আমারই হওয়া উচিৎ। সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চাইলেও ওরা সেটা মানেনি।” প্রেমিকার সিদ্ধান্তকে সন্মান দিয়ে নতুন সংসার পাতা প্রেমিক যুবককের বক্তব্য, ”বছর খানেকের সম্পর্ক হলেও মাস আটেক যাবৎ মেলামেশা গভীরতর হয়েছে। ওকে এনিয়ে কয়েকবার বুঝিয়েছি তবে শেষপর্যন্ত ও যেটা চাইছে সেটা মেনে আমিও ওর সঙ্গেই সংসার করতে চাই। এই কারণে সকলে লিখিত চুক্তির কথা বলায় আমিও রাজি হই। আমরা দুজনই দুজনকে ভালো রাখব।”