সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কয়েক দিন আগেই গোটা দেশ অভিভূত হয়েছিল তাঁর আত্মত্যাগের কাহিনি শুনে। নাতনির পড়াশোনার খরচ চালাতে নিজের বসত বাড়িটিই বেচে দিয়েছিলেন মুম্বইয়ের (Mumbai) এই অটোচালক (Auto driver) বৃদ্ধ। এমন নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেটিজেনরা। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা। ফেসবুকের এক ইউজার শুরু করেছিলেন তাঁর সাহায্যার্থে অনুদান সংগ্রহের কাজ। অবশেষে ২৪ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হল মুম্বইয়ের খার এলাকায় অটো চালক দেসরাজের হাতে।
ফেসবুক পেজ ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’-তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর হৃদয়স্পর্শী কাহিনি। রাতারাতি দেশজুড়ে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন দেসরাজ। তাঁর দুই পুত্রের কেউই বেঁচে নেই। বড় জন ছ’বছর আগে বাড়ি থেকে কাজের জন্য বেরিয়েছিলেন। ফেরেননি। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। দু’বছর পর আত্মঘাতী হন ছোট ছেলেও। ফলত, দুই ছেলের স্ত্রী এবং চার নাতি-নাতনির দেখাশোনার ভার এসে পড়ে বৃদ্ধ অটোচালকের উপরই। এদিকে তাঁর মাসিক রোজগার ১০ হাজার টাকার মতো। এর মধ্যে ৬ হাজার টাকাই চলে যায় নাতি-নাতনিদের পড়াশোনার খরচ চালাতে। বাকি ৪ হাজার টাকায় কোনওক্রমে টেনেটুনে ‘চলত’ সংসার, যার সদস্যসংখ্যা বলতে দেসরাজ নিজে, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্রবধূ এবং চার জন নাতি-নাতনি।
[আরও পড়ুন: বিয়ে করতে গিয়ে বিপত্তি, বাজির শব্দে মেজাজ হারিয়ে বরকে নিয়ে ছুটল ঘোড়া, তারপর…]
এই পরিস্থিতিতে প্রবল অর্থকষ্টে স্কুল ছাড়ার উপক্রম হয়েছিল দেসরাজের বড় নাতনির। তখনও তার পাশে ছিলেন হার না মানা এই বৃদ্ধই। উপার্জন বাড়াতে কাজের সময় বাড়িয়ে দেন, অধিকাংশ দিন না খেয়ে কাটিয়ে দিতে থাকেন। কিন্তু সমস্যা বাধে তখন, যখন দ্বাদশের পরীক্ষায় দারুণ ফল করার পর নাতনি দিল্লিতে বি.এড কোর্স করতে যেতে চায়। এরপরই দেসরাজ বিক্রি করে দেন নিজের বাড়ি। পরিবারের বাকি সদস্যকে পাঠিয়ে দেন গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নিজে থাকতে শুরু করেন তাঁর অটোতে।
এমন আত্মত্যাগে মুগ্ধ হন নেটিজেনরা। তাই তাঁর জন্য অনুদান তুলতে কোনও সমস্যা হয়নি ওই ফেসবুক ইউজারের। বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন তাঁর সাহায্যার্থে। শেষ পর্যন্ত সোমবার দেসরাজের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ২৪ লক্ষ টাকা। মানুষের এমন ভালবাসা পেয়ে অভিভূত দেসরাজ। হাসিমুখে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হার না মানা মানুষটি।